বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে বিজি প্রেসের সদস্যদের যোগসূত্রও খোঁজা হচ্ছে। তাঁদের বেশ কয়েকজনকে সন্দেহে রেখে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির ভাষ্য, পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে বিজি প্রেসের অনেকে জড়িত থাকতে পারেন। তাঁদের মধ্যে পিএসসির এক সময়ের গাড়িচালক আবেদ আলীর লোকও থাকতে পারে।
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিজি প্রেসের কর্মীদের জড়িত থাকার তথ্য আগেও পাওয়া গেছে জানিয়ে গতকাল একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১১ সালে শেরেবাংলানগর থানায় আবেদ আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই মামলায় বিজি প্রেসেরও দুজন কর্মকর্তা আসামি ছিলেন। ২০১৪ সালে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে তখন মাত্র দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।
সিআইডির ভাষ্য, গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীচক্রের অন্যতম হোতা পিএসসির সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। শুধু পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায়ই নয়, ২০১০ সালে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও তাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় তিনি প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছিলেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসে কারা জড়িত, অন্যান্য প্রশ্নপত্র কিভাবে ফাঁস করা হয়, সে তথ্যও তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেন।
ওই সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আবেদ আলীসহ আরো কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে সূত্র জানায়, ওই সময় ভর্তি পরীক্ষার এই প্রশ্নগুলো বিজি প্রেসের যাঁরা টাইপ করতেন, সেখানে আবেদ আলীর লোক ছিল। তাঁরা প্রশ্নগুলো মুখস্থ করে ফেলতেন। তাঁরা সবাই মিলে প্রশ্ন ফাঁস করতেন। তাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পাঠাতেন। সেই কোচিং সেন্টারগুলোও শনাক্ত করে গোয়েন্দা সংস্থা।
সিআইডি সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত পিএসসির যত প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, সেগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছেন ভেতরের কর্মকর্তারা।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফাঁস করা প্রশ্ন গণহারে না ছেড়ে তা বিক্রি করত পিএসসির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মাধ্যমে আবেদ আলী চক্র। এরা নির্বাচিত প্রার্থীদের কাছে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন দিত। প্রশ্নগুলো যেন বাইরে না যায়, সে জন্য বাসা ভাড়া করে প্রার্থীদের তিন-চার দিন ধরে প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠাত।
অধরা এজাহারভুক্ত ১৪ জন
মামলার এজাহারভুক্ত ১৪ জন এখনো অধরা রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার করতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ পলাতক এসব সদস্যের মধ্যে রয়েছেন মো. শরীফুল ইসলাম, দীপক বণিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এ টি এম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদুর রহমান বলেন, বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে জবানবন্দি দিয়েছেন ছয়জন। তাঁদের বক্তব্য ও জবানবন্দিতে উঠে এসেছে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অনেকের নাম।