আজ শনিবার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন। শুরু হলো বাঙালির চিরগৌরব, চিরপ্রেরণার ভাষার মাস। আজ থেকে ঘরে-বাইরে সবখানে শোনা যাবে একুশের গান। আবারও বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের স্মৃতি তাজা হয়ে উঠবে।
ভাষা ঘিরে এই অভূতপূর্ব জাগরণ তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্লজ্জ বৈষম্য সৃষ্টি থেকে। ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’—৭৩ বছর আগে পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার মানুষ এই অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তাই বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব বাংলায় দ্রুত দানা বাঁধে আন্দোলন।
আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ অমান্য করে ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীরা মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা আরো অনেকে। এতে তীব্র আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ বাঙালির ভাষাশহীদ দিবস। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি স্মরণ করিয়ে দিতে দিনটি বাঙালি জাতির জন্য বিশেষ আবেগের। মাতৃভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত দেওয়ার উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ভাষার জন্য বাংলার সূর্যসন্তানদের এই বিরল আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর।
এদিন ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বের দেশে দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শুধু বাংলা ভাষা নয়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরো যেসব ভাষার মানুষ আছে, তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষা বিকাশের উদ্যোগ বেগবান করার তাগিদ দেয় এই দিবস।