গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়ার জামান এর পরকীয়ার জেরে মোছাঃ রাশিদা বেগম (২৮) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠছে। পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরকীয়া প্রেমিক জামান ও তার সহযোগী দুলাল তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া গ্রামের প্রবাসী আব্দুল মোতালিব মাঝি রাশিদা বেগম কে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে ০২ জন কন্যা সন্তান আছে রিমি ও রিদিয়া। তবে স্ত্রী রাশিদা স্বামীর বাড়িতে বসবাস করেন। স্বামীর দাবি জামানের সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত তার স্ত্রী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্শ্ববর্তী বাড়ির চাচি সম্পর্কের এক মহিলা সাংবাদিকদের জানান, আব্দুল মোতালিব এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু জামান, সেই সুবাদেই বাসায় যাতায়াত করতেন, কিছুদিন পর মোতালিব বুঝতে পারেন তার স্ত্রীর সাথে বন্ধু জামানের অবৈধ সম্পর্ক আছে। তখন জামানকে হাতে পায়ে ধরে অনেক অনুরোধ করে বলছেন যে তুমি আমার সংসারটা নষ্ট করোনা, কিন্তু বন্ধুর কথা না রেখে স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক আরো জোরালোভাবে তৈরি করছেন এই জামান। এবং জামান ও স্ত্রী মিলে চক্রান্ত করে মোতালেবকে প্রবাসে পাঠিয়ে দেন।
বন্ধু জামান বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, কয়েকবার ঘরোয়া ভাবে সালিশি বিচার হলেও কাউকেই সে মানেনা। এ ব্যাপারটা দু পক্ষের পরিবারবর্গ জানতেন জামানের স্ত্রী বহুবার মানুষের কাছে বিচার দিয়েও কোন লাভ হয়নি এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর।
আরেকজন বৃদ্ধ মহিলা জানান, জামানকে প্রায় সময়ই বাড়ির আশেপাশে দিনে এবং রাতে যাতায়াত করতে দেখা যেতো আপনারা অনুসন্ধান করে তথ্য বের করে মুখোশ খুলে দিন।
দশ বছরের মেয়ে রিমি সাংবাদিকদের জানান, আমার মা আমাদের রেখে প্রায় দিনই জামান আঙ্কেলের সাথে কোথাও ঘুরতে যেত, সারাক্ষণ তার সাথে ফোনে কথা বলতো এবং রাতে বাসা থেকে বের হয়ে ৩-৪ ঘন্টা পর বাসায় আসতেন। রাতে জামান আঙ্কেল বাড়ির পাশে এসে ফোন দিতেন তখন মা বের হয়ে যেতেন।
৪ বছরের ছোট মেয়েটা বলে মা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিত। তার পর জামান আঙ্কেলের সাথে কথা বলতো, দেখতাম রাতে বাসা থেকে কোথায় যেতো আমি একা বাসায় ভয় পেতাম এভাবেই বলে আর চোখের পানি অঝরে ঝরে।
মোতালেব এর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বলেন, আমরা কিছু বলতে পারছিনা, বাচ্চাদের কাছ থেকে শুনলেন। আপনারা অনুসন্ধান করে সত্য ঘটনা বের করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক মহিলা মেম্বার জানান, পরিবারের দুই পক্ষ অনেকবার ঘরোয়াভাবে বসে সমাধান করার চেষ্টা করার পরও এই নরপিশাচ আওয়ামী লীগ নেতা জামান রাশিদাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলেন। তদন্ত সাপেক্ষে এর সঠিক বিচার দাবি করি। আব্দুল মোতালিব এর বাবা আফসার উদ্দিন মাঝি শ্রীপুর থানায় অপমৃত্যুর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
মোঃ আফসার উদ্দিন মাঝি (৬৫) সাংবাদিকদের জানান, আমার ছেলে- আব্দুল মোতালিব মাঝি (৪৫) এর সাথে বিগত অনুমান ১৫ বছর পূর্বে কাপাসিয়ার মোতাহার হোসেন খান (৭০) এর মেয়ে- মোছাঃ রাশিদা বেগম (২৮) কে বিবাহ করাইয়া আমাদের বাড়ীতে নিয়া আসি। তাহাদের দাম্পত্য জীবনে ০২ জন কন্যা সন্তান- ১। মোছাঃ রিমি (১০) ও ২। মোছাঃ রিদিয়া (০৪) জন্মগ্রহণ করে। আমার উক্ত ছেলে গত প্রায় ০১ বছর যাবৎ প্রবাসে থাকে। এমতাবস্থায় গত ২৭শে অক্টোবর রাত্র অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় আমরা রাত্রের খাওয়া শেষ করিয়া যে যার মতো ঘরে ঘুমাইয়া পড়ি এবং আমার বড় নাতনী- মোছাঃ রিমি আমার ছোট ছেলের ঘরে ঘুমাইয়া ছিল।
আমার ছেলের স্ত্রী রাশিদা ও তাহার ছোট মেয়ে- মোছাঃ রিদিয়া কে সাথে নিয়া আমাদের বসত বাড়ীর পশ্চিম-উত্তর পার্শ্বে তাহাদের রুমে ঘুমিয়ে ছিল। উক্ত দিবাগত রাত্র অনুমান ০১.৫০ মিনিটের সময় আমার ছোট নাতনী চিৎকার করিয়া দরজা খুলিয়া আমাদেরকে ডাকিয়া তোলে এবং আমরা ঘুম হইতে উঠিয়া তাহাদের ঘরে যাইয়া দেখি যে, আমার বড় ছেলের স্ত্রী- মোছাঃ রাশিদা বেগম তাহাদের ঘরের উত্তর পার্শ্বের গ্রিলের জানালায় নিজের পরিহিত ওড়না দিয়া গলায় ফাঁস লাগাইয়া মৃত অবস্থায় ঝুলে আছে। পরে আমরা ডাক চিৎকার ও ফোন করিয়া আশপাশের লোকজন সহ আমাদের আত্মীয়-স্বজন এবং পুলিশকে খবর দেই।
আমার ধারণা হইতেছে যে, রাত্র অনুমান ১০.০০ ঘটিকার পর হইতে দিবাগত রাত্র অনুমান ০১.৫০ ঘটিকার সময়ের মধ্যে যে কোন সময় আমাদের সকলের অগোচরে এই ঘটনা ঘটছে।
কি হয়েছে আমরা জানিনা। মেকআপ মাখা ছিল, নতুন কাপড় পড়া ছিল, দরজা খোলা ছিল। সেজেগুজে এভাবে কোন সময় রাতে ঘুমাতেন না। আপনাদের মাধ্যমে আমরা সঠিক ঘটনাটি জানতে চাই ও বিচার চাই।
যিনি মৃত রাশিদাকে গোসল করিয়েছেন তিনি জানালেন উনি খুব সাজুগুজু অবস্থায় ছিলেন তার মেকআপ ও লিপস্টিক ছিল তবে তার শরীরে একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে আমি বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাই না ময়নাতদন্ত
রিপোর্টে আপনারা জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে জামানের মোবাইলে বারবার কল দিলেও কল রিসিভ করেননি। জামানের বোন রোজিনা জানান, আপনারা যে তথ্য পেয়েছেন তাই উদঘাটন করবেন মূল অপরাধীর শাস্তি হোক এটা আমরাও চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মোক্তার হোসেন মোল্লা জানান, এই ঘটনাটি অপমৃত্যু নয় হত্যা এবং আসামিপক্ষ আওয়ামী যুবলীগ নেতা অনেক ক্ষমতাবান তাদের টাকার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। আরও জানান বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। এবং সব জায়গায় প্রচার করিতেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, পুলিশ, সাংবাদিক, এলাকার মেম্বার ও বাদীসহ সকলকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেছেন আর কোন সমস্যা নেই। দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটা নিউজ প্রকাশিত হওয়ায় সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে আসছেন অভিযুক্ত জামানের মামা পরিচয়দানকারী এলাকার পাতি নেতা জহির, এছাড়াও অন্য এক সাংবাদিককে জহির ফোন দিয়ে হুমকি দেন নিউজ করে আপনারা কি করতে পারেন সেটা আমার দেখার আছে।
এবিষয়ে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার এসপি আবুল কালাম আযাদ বলেন, আমি শ্রীপুর থানায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।