Friday , 8 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
ট্রাম্পের জয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে বাংলাদেশ : কুগেলম্যান
--ছবি: এএফপি

ট্রাম্পের জয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে বাংলাদেশ : কুগেলম্যান

অনলাইন ডেস্কঃ

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের প্রভাব কী হবে তা অনুমান করা কঠিন। কারণ ট্রাম্প সম্পর্কেই অনুমান করা কঠিন। অতীতে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্প যা যা করেছেন তা থেকে তাঁর কর্মকাণ্ড ও নীতি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায়। কিন্তু এবার যে তিনি ভিন্ন কিছু করবেন না তা তো কেউ নাকচ করতে পারে না।

আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ এশিয়ার দেশগুলোও তাদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকবে। বড় ইস্যু হলো, ট্রাম্প প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে বোঝা ভাগাভাগি, বিশেষ করে অর্থনৈতিক বোঝা ভাগাভাগির ওপর জোর দিয়েছেন।

ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আলোকে ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে কাজ করবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়াতে দৃষ্টি থাকবে ট্রাম্পের। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতার পটভূমিতে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ যাতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের খুব কাছে না যায় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে ট্রাম্প প্রশাসন। সুনির্দিষ্ট কিছু দেশের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের কাজ করার ধরন বদলাবে। যেমন—ভারত। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ওই দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্কের অগ্রাধিকারে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে সহযোগিতাকেও ট্রাম্প প্রশাসন অগ্রাধিকার দিতে চাইবে বলেও আমি নিশ্চিত নই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে বাণিজ্যক্ষেত্রে বিশ্বে যে উত্তেজনা ছিল তা আবার নতুন করে দেখা দিতে পারে। তবে রাশিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান উত্তেজনা কিছুটা কমতেও পারে বলে আমার ধারণা।

রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের জোরালো সম্পর্ক আছে। এটি বাইডেন প্রশাসনের কাছে উদ্বেগের বিষয় ছিল। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর নয়াদিল্লি-মস্কো জোরালো সম্পর্ক বাইডেন প্রশাসন ভালোভাবে নেয়নি। তবে আমার ধারণা, রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্প বাইডেনের চেয়ে আরো সংযত অবস্থান নেবেন। রাশিয়া ফ্যাক্টর, ভারত-রাশিয়া জোরালো সম্পর্কের কারণে ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের মধ্যে রাশিয়া বড় ইস্যু না-ও হতে পারে।

তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানে নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতি সত্ত্বেও আমরা হয়তো দেখব, ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী।

আমি বলব, ট্রাম্পের বিজয়ের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হওয়ার পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে পুরোপুরি নতুনত্ব এসেছে। বাংলাদেশ স্থিতিশীল, পুনর্গঠিত ও সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগিতা, মানবিক সহায়তা গুরুত্ব পাচ্ছে। আমার মনে হয় না, ট্রাম্প প্রশাসন এই সম্পর্ককে এই কাঠামোতে রাখার চেষ্টা করবে।

আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে বেশি গুরুত্ব দেবে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অতীতে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁদের দুজনের রাজনীতির ধরন এক নয়। রাজনীতি ও বৈশ্বিক বিষয়ে তাঁদের দুজনের ভাবনায় অনেক পার্থক্য আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে।

আমি মনে করি, ট্রাম্প প্রশাসন ও ড. ইউনূসের সরকার—উভয়েই সফল ও স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দেখতে চাইবে। তবে এই সম্পর্কের শুরুর দিকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

লেখক : যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply