ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভোয়া) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের একজন নেতা দাবি করেছেন, গদিচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বাংলাদেশের রাজপথে উত্তেজনা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছেন।
গত শুক্রবার এই সাক্ষাৎকার গৃহীত হয়। ভোয়া এই আওয়ামী লীগ নেতার নাম ও পদবি উল্লেখ করেছে। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী।
তাঁর ভাষায়, ‘আমরা রাজপথে মিছিল ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের যেসব নেতা গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন অথবা দেশেই পলাতক রয়েছেন, তাঁদের অন্যতম হচ্ছেন শফিউল আলম চৌধুরী।
গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে চলতি মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী আদালত (আইসিটি) শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ৪৫ নেতার নামে পরোয়ানা জারি করেছেন।
ভোয়াকে মোবাইল ফোনে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে শফিউল আলম চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগ এখন দলীয় নেতাকর্মীদের সংহত করার কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কর্মসূচি পালনই এই তৎপরতার মূল লক্ষ্য। রাজপথে কতটা দ্রুততম সময়ে আওয়ামী লীগ মাঠে নামতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দলটির পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
ভোয়া লিখেছে, শফিউল আলম চৌধুরী যখন আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা মেলে ধরলেন, তখন কিন্তু বাংলাদেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফেলেছে। কারণ বাংলাদেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একমত যে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপও সৃষ্টি করছে। কারণ রাজনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম যতটুকু হয়েছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলো সন্তুষ্ট নয়।
অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপে বসলেও আওয়ামী লীগকে তারা সংলাপে ডাকেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান মনে করেন, আওয়ামী লীগকে সংলাপে ডাকলে এর প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক হবে না। তবে তিনি এটাও মনে করেন, আওয়ামী লীগকে কিছুটা হলেও রাজনৈতিক স্পেস দেওয়া দরকার, যাতে তারা অন্তত নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় না। কারণ আমরা মনে করি ডক্টর ইউনূসের সরকার অসাংবিধানিক। আমরা যদি দেশজুড়ে মাঠে নামতে পারি, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’