Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবি: রাজনৈতিক ঐক্যের চেষ্টায় ছাত্রনেতারা
--File photo

রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবি: রাজনৈতিক ঐক্যের চেষ্টায় ছাত্রনেতারা

Online Desk:

রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে সরানোর দাবির পক্ষে ঐকমত্য তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন দুই সংগঠনের নেতারা।

আন্দোলনের ছাত্রনেতৃত্ব ও নাগরিক কমিটি তাদের দাবিতে অনড় থেকে এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে দুটি টিম গঠন করা হয়েছে।

প্রথম বৈঠক করেছে বিএনপির সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার রাতে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের একটি দল ওই রাতে ঢাকার গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বাসায় যায়। পরে সেখানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও যোগ দেন।

এ ছাড়া ২৩ অক্টোবর সালাহউদ্দিন আহমেদসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের তিনজন নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না করার কথা বলেছিলেন। দলটি মনে করে, এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে, সেটা বিএনপি চায় না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির দুই নেতা তাঁদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি ছাত্রনেতাদের এ-ও বলেছেন, তাঁরা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে ছাত্রনেতাদের দাবি ও বক্তব্যগুলো জানাবেন।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা গতকাল শুক্রবার বৈঠক করেন জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতার সঙ্গে। মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও হামিদুর রহমান আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সাহাবুদ্দিনকে সরানোর বিষয়ে ছাত্রনেতৃত্বের দাবির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী নীতিগতভাবে একমত বলে জানায়। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন করার পক্ষে মত দেয় দলটি।

রাষ্ট্রপতির অপসারণ এবং তারপর কী করণীয় হবে, এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরো আলোচনা করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সমাধান করতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি। সে কথা তারা বৈঠকে জামায়াত নেতাদের জানিয়েছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

বিএনপির সঙ্গে যারা বৈঠক করেছিলেন, তাদের মধ্যে সারজিস আলম ছাড়া বাকিরা জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা পাঁচ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি। একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করছি। আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য তৈরি হওয়ার পর আমরা আমাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাব।’

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণসহ পাঁচ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। গত বুধবার বিএনপির তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা সৃষ্টি না করার মত দেন। এরপর বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।

গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। একজন উপদেষ্টা গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল এ মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পক্ষে নয়। ছাত্রনেতৃত্বও চাপ বাড়াচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে জটিলতা বাড়তে পারে বলে সরকার মনে করছে। সে জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই এর সমাধান খোঁজার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি বিএনপি ও জামায়াতের পর পর্যায়ক্রমে ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।

বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ছাত্রনেতাদের অনেকে মনে করছেন, তাঁদের দাবির পক্ষে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা সম্ভব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমরা যা বুঝতে পারলাম, রাষ্ট্রপতিকে সরানো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু পরবর্তী প্রক্রিয়া, দেশে যাতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে; সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে সরানো বা সংবিধান পরিবর্তনের আলোচনা কীভাবে এগোনো যায়, সেটি নিয়ে আরো আলোচনার অবকাশ আছে। সে জন্য হয়তো আমাদের আরো সময় নিতে হবে; কিন্তু আলোচনার অগ্রগতি ইতিবাচক।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply