একই তথ্য দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। শনিবার রাতে কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকায় আয়োজিত এক সমাবেশে হাসনাত বলেছেন, ‘পালিয়ে গিয়েও খুনি হাসিনা দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন।
সমাবেশ করার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগ নেতারা ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন বলেও দাবি করেন এই সমন্বয়ক।
মাসুদ বলেছেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, কিন্তু তারা নিজেরা তো এখান থেকে পদত্যাগ করে পালায়ছে গণঅভ্যুত্থান-গণবিপ্লবের মুখে জনরোষ থেকে বাঁচতে।
“আমরা জানিয়েছি এবং এ ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছি,” বলেন মাসুদ।
“আমরা এটাও বলেছি যে, সরকারের পক্ষ থেকে কথা বলে প্রয়োজনে ভারতকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে যেন তাদের মাটি ব্যবহার করে কেউ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করতে পারে,” বলেন ওই সমন্বয়ক।
যদিও বিষয়টি নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
কী বলছে আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগ ভারতের মাটিতে সমাবেশ ও প্রবাসী সরকার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক যে দাবি করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই বলে বলছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “এগুলো সব ভিত্তিহীন, অসত্য এবং প্রোপাগান্ডা।”
ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ চালাতে পারছে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
“দেশে এখন জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, অরাজকতা চলছে। মোটকথা, কোনোকিছুর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই,” বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সিনিয়র আরেকজন নেতা।
এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাচ্যুত দলটির নেতারা।
“নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই তারা এখন এসব প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। কিন্তু এসব করে পার পাওয়া যাবে না। ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন অবৈধ সরকারকে নিতে হবে,” বলেন নাছিম।
তবে দলটির নেতাকর্মীদের অনেকে যে ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন এবং এখনও ছাড়ার চেষ্টা করছেন, সেটি অবশ্য স্বীকার করেছেন তিনি।
“আমাদের নেতাকর্মীদের উপর যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন-মামলা-হামলা চালানো হচ্ছে, তাতে করে জীবন বাঁচাতে কেউ যদি দেশের বাইরে আশ্রয় নেয়, সেটা কি সে পারে না?,” বলছিলেন নাছিম।
ভারত কী বলছে?
ভারত সরকারের কর্মকর্তারাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবিকে সম্পূর্ণ “গাঁজাখুরি ও ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ভারত অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
“কারা বলছেন এসব কথা? তারা কি কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদে আছেন? পাশের দেশে যে কেউ একটা আজগুবি কথা বললেই আমরা কেন জবাব দিতে যাবো?” ভারত সরকারের একটি সূত্র এভাবেই বিবিসি বাংলাকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
এ ধরনের দাবির যে কোনও ভিত্তি নেই, সেটা অবশ্য ত্রিপুরা ও দিল্লিতে নানা মহলে খোঁজখবর নিয়েও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কারণ, প্রথমত, আওয়ামী লীগের পালিয়ে আসা নেতা-কর্মীরা যদি ত্রিপুরার মাটিতে বড় মাপের কোনও সমাবেশ করতে চান, সেটা একেবারে গোপনে বা স্থানীয়দের কাউকে টের পেতে না-দিয়ে করা সম্ভব নয়।
ত্রিপুরার সরকারি ও বেসরকারি একাধিক সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, রাজ্যটির রাজধানী আগরতলায় এ ধরনের কোনও তৎপরতা গত কয়েক সপ্তাহে আদৌ তাদের চোখে পড়েনি।
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ যদি ভারতের মাটিতে কোনও প্রকাশ্য সভা করেও, সেখানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ভাষণ দিতে দেওয়া হবে-সেই সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
গত আড়াই মাসে ভারত বারেবারে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে, এক বিশেষ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে নিজের সুরক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে ভারতে চলে আসতে হয়েছে এবং তখন তাকে আতিথেয়তা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে অংশ নিতে দেওয়া হবে, ভারত এখনও এরকম কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ফলে প্রকাশ্য কোনও রাজনৈতিক সভায় তিনি ভাষণ দিলে বা তার অডিও বার্তা প্রচার করা হলে দিল্লির জন্য তা কূটনৈতিকভাবে খুবই অস্বস্তিকর হবে।
ফলে শেখ হাসিনাকে আপাতত সেটা ‘অ্যালাও’ করা হবে না বলে বলছেন কর্মকর্তারা।
তৃতীয়ত, পাঁচই অগাস্ট বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী পালিয়ে ভারতে চলে এসেছেন সেটা ঠিকই। এদের অনেকেরই আগে থেকে ভারতের ভিসা ছিল, কেউ কেউ আবার এসেছেন ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’।
বিবিসি জানতে পেরেছে, ভারত তাদের সবাইকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘লো প্রোফাইল’ বজায় রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রকাশ্য কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতেও নিষেধ করা হয়েছে।
রাতারাতি সেই অবস্থান পরিবর্তন করে ভারতের মাটিতে সমাবেশ করতে উৎসাহ দেওয়া হবে – এমন কোনও কারণ ঘটেনি বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিবিসি’র শুভজ্যোতি ঘোষের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি পদস্থ সূত্র বলেছেন, “আওয়ামী লীগ ভারতের মাটিতে শক্তি সঞ্চয় করে বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে, এজন্যই সীমান্তের খুব কাছে সভা-সমাবেশ করছে – বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী জুজু দেখাতেই এগুলো বলা, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমাদের সেই ফাঁদে পা-দেওয়ার কোনও কারণ নেই!”
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা