Saturday , 23 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
শেখ হাসিনা যেভাবে দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারেন
--ফাইল ছবি

শেখ হাসিনা যেভাবে দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারেন

অনলাইন ডেস্কঃ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ একসময় সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নেওয়ার পর ঘটে এই অভ্যুত্থান, যার রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। আন্দোলনে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আরো কয়েক হাজার আহতের ঘটনার জন্য দেশের জনগণ প্রধানত দায়ী করেছে শেখ হাসিনাকে।

শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে আওয়ামী লীগ কার্যত নিষ্ক্রিয়। ইতিমধ্যে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা যখন দেশত্যাগের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ সবার মধ্যে এমন একটি ধারণা দৃঢ় ছিল যে ৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বাকি জীবন কাটবে নির্বাসিত অবস্থাতেই। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী ফলাফল দেশে-বিদেশে শেখ হাসিনার এমন নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার ফেরা আর সম্ভব হবে না।

নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক এবং বাংলাদেশের নাগরিক মোবাশ্বের হাসান এ প্রসঙ্গে টাইম সাময়িকীকে বলেন, ‘বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকার বৈধতা রয়েছে, জনসমর্থনও রয়েছে; কিন্তু এই সরকার নির্বাচিত কোনো সরকার নয়। এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। শেখ হাসিনা যদি চান, তাহলে এই দুর্বলতাকে ব্যবহার করে একসময় দেশে ফিরে আসতে পারবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক সংস্থা উইলসন সেন্টারের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানও এমনটা মনে করেন। টাইম সাময়িকীকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন শুধু সম্ভবই নয়, খুবই সম্ভব। কারণ পরিবারতন্ত্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় এটি চলে আসছে। মাত্র একটি বাংলাদেশে এই সংস্কৃতির অবসান ঘটবে— এমনটা প্রত্যাশা করা যায় না। তারপরও হয়তো বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেত, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হতো। কিন্তু দেশটির যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, তাতে এটি একেবারেই সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ এখনো বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।’

বাংলাদেশের থিংকট্যাংক সংস্থা সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান টাইম ম্যাগাজিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং তার চলে যাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকবে— তা একেবারেই ভিত্তিহীন কল্পনা। তবে এই সরকার যদি সার্বিকভাবে ভেঙে পড়ে, তাহলে যেকোনো কিছুই সম্ভব।’

এবং এই সরকারের ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বেশ ভালোভাবেই রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক শহীদুল হক। টাইম ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। ১৫ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পুরো আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনকে নিজের মতো করে সাজিয়েছে দলটি। বর্তমান সরকার কয়েকজন চিহ্নিত আমলা ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পুরো প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো এই সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া প্রশাসন ঢেলে সাজাতে গেলে আমলাতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। অন্তর্বর্তী সরকার পারতপক্ষে কোনোভাবেই এ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। এই প্রশাসন এবং আমলাতন্ত্রই আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ফের রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনবে।’

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে যে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তিনি দলের হাল ধরবেন। তিনি সত্যিই এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে টাইম ম্যাগাজিনকে জয় বলেন, ‘আমার কখনোই রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না; কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে ভবিষ্যতে কী হয় তা কে বলতে পারে? আমি এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি।’

তবে জয় যদি রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এই মুহূর্তে সেটি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ মীনাক্ষী গাঙ্গুলী।

টাইম সাময়িকীকে মীনাক্ষী গাঙ্গুলী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, দলটির রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার পুরোটাজুড়েই রয়েছেন শেখ হাসিনা। তারা বঙ্গবন্ধুকন্যার বাইরে অন্য কাউকে দলীয় প্রধান বা সরকারপ্রধানের পদে দেখতে প্রস্তুত নয়। আওয়ামী লীগ যদি তার ভুলগুলো স্বীকার করে, দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি করে এবং নিজেকে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে, শুধু তাহলেই বর্তমান সংকট থেকে দলটির উত্তরণ সম্ভব।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply