ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এখনই কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক করারও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এমন তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব প্রচার করা হচ্ছে তা সত্য নয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে। আবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হচ্ছে—এমন আলোচনাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন বা কাউকে সাংগঠনিক কোনো দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেননি।
তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের জন্য যে খারাপ পরিস্থিতি এসেছে, তা কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। দলের কঠিন সময়ে কোন নেতাদের সংগঠন গোছানোর কাজে লাগাবেন সেসব নিয়েও আলোচনা করছেন শেখ হাসিনা। তবে তিনি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সভাপতি পদে থাকবেন।
তবে যেহেতু তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন সে কারণে দেশে একজনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক নম্বর সদস্য মোশাররফ হোসেন বা দুই নম্বরে থাকা মতিয়া চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক পদেও একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এর কোনোটিই চূড়ান্ত হয়নি।
দলের কেন্দ্রীয় একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল।
সেই চেষ্টা এবারও দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা বিদেশে অবস্থান করছেন, অনেকেই দেশে আত্মগোপনে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তনের নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কাদের বিরুদ্ধে কী মামলা হচ্ছে, কারা গ্রেপ্তার হতে পারেন, সে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা হচ্ছে। ঢালাও মামলা করা কমে এলে মূলত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দলের কোন নেতাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
মাঠে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রেও ধীরে চলো নীতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা এখন সরকার, জামায়াত ও বিএনপির কর্মকাণ্ডের প্রতি নজর রাখছে। দেশে কী ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গেও যোগাযোগ, আলোচনা চলছে। আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগের সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। মূলত বিদেশে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারাই এই যোগাযোগগুলো করছেন।
বিদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র মতে, শিগগিরই কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি দিতে চায় না আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। তারা আপাতত চুপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কৌশল নিয়েছে। তারা পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এলে দলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশনা দেবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের নেতাকর্মীরা হামলা, মামলায় চরম বিপদের মধ্যে আছেন। ফলে এখন তাঁদের মাঠে নামিয়ে বিপদ আরো বাড়াতে চাই না। এখন আমরা দল পুনর্গঠনে মনোযোগ দিচ্ছি। নিজেদের গুছিয়ে নেওয়াটাই এখন বড় কাজ। সঠিক সময় বুঝে আমরা মাঠে নামব।’