রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের যেসব নেতাকর্মী অপরাধে জড়িয়েছেন, তাঁদের বিচারের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। তাঁদের অপরাধের বিচার রাষ্ট্র করবে। কিন্তু সেই অপরাধের বিচারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে—এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে না। সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তা সমর্থনও করে না।
তাই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাগরিকের অধিকার রক্ষা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সরকার একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করবে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও এর নিবন্ধন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার রিটটির শুনানি হয়। রিটকারী পক্ষের সময় আবেদনে ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। অথচ সেই রিটে আওয়ামী লীগকে বিবাদী করা হয়নি।
আপনি একজনকে শাস্তি দেবেন; অথচ তাঁকে নোটিশ করে তাঁর বক্তব্য শুনবেন না—এটা হতে পারে না।
আদালতের উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাজপথের রাজনীতি আদালতে টেনে আনা ঠিক হবে না। অতীতে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থের মামলার নামে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। আমরা চাই এ অপব্যবহার বন্ধ হোক।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার সলিল চৌধুরীর গণসংগীত ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা’ উচ্চারণ করে আসাদুজ্জামান বলেন, এই মর্মবাণী প্রয়োগ হয়েছে আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে।
তখন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ হয়েছে। পতন হয়েছে কর্তৃত্ববাদী সরকারের। এই সুপ্রিম কোর্টে কোনো আঘাত এলে সেই আঘাত আমার হৃদয়ে লাগে, রক্তক্ষরণ হয়। সুপ্রিম কোর্টের ওপর কোনো প্রেক্ষাপটে এমন আঘাত এলে সেটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতের মানসম্মান ও ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার দায়িত্ব শুধু আইনজীবী বা জনগণের নয়। আদালতেরও দায়িত্ব আছে। আদালত যদি এমন কোনো কাজ করে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়, তাহলে ওই বিচারক আদালত অবমাননার দোষে দোষী হতে পারেন।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, আমরা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, সংগঠন করা ও কথা বলার অধিকার, আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার হরণ করতে চাই না। সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার হিসেবে যেসব বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা আমরা সমুন্নত রাখতে চাই।
যাদের (আওয়ামী লীগ) লাখ লাখ নেতাকর্মী, তাদের অনেকেই গত ১৫ বছরে হালুয়া-রুটির ভাগ পায়নি। অনেকে আবার এই হালুয়া-রুটি চায়নি। সেসব ভালো নেতাকর্মী যদি আওয়ামী লীগের আদর্শ অনুসরণ করে সংগঠন করতে চায়, সেটাতে আমি বা আমরা বাধা দিতে পারি না।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনকারীদের নির্বিচারে হত্যার দায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া। রিটে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের নির্দেশনাও চাওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জন বিভাগের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, আইনসচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কদের বিবাদী করা হয় রিটে।