অনলাইন ডেস্কঃঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও জট খুলতে পারেনি বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। এখনো জানা যায়নি হত্যার সঠিক কারণ। ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ সন্দেহভাজন অনেককে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।এ অবস্থায় এমপি আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুসহ তিনজন তাঁদের আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না।
জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করা অন্য দুজন হলেন শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমান উল্লাহ সাঈদ ও তানভীর ভূঁইয়া। এই আসামিরা জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চেয়েছেন। এতে মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আদালতে যে কেউ আবেদন করতে পারেন।
আদালত গ্রহণও করতে পারেন, আবার বাতিলও করতে পারেন। এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাতজনের মধ্যে ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ ছাড়া ভারতীয় পুলিশের কাছে দুজন আছেন।’ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আগেও আমরা বলেছি, অযথা কাউকে ডাকাডাকি করছি না। আবার এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, সে যত বড় নেতাই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আরো বেশ কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে মাস্টারমাইন্ড দেশের বাইরে রয়েছে।
সব কিছু মিলিয়েই তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে অবাধ ও সুষ্ঠু তদন্ত করছে ডিবি। তদন্তের প্রয়োজনে আমরা কলকাতা ও নেপালে গেছি। আদালতের অনুমতি নিয়ে গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে ঝিনাইদহের দুটি পুকুরে মোবাইল উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়েছে।’সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে শুধু দেশের অপরাধী চক্র নয়, একাধিক ভারতীয় নাগরিকও জড়িত থাকতে পারে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় অনেকে। তদন্তের এ পর্যায়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আনার কলকাতায় গিয়ে গোপালের বাড়িতে উঠেছিলেন। সেখান থেকে আনার রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গোপালকে কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি কেন? এই হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততাও থাকতে পারে।’শুধু এই নেতাই নন, আরো অন্তত ১৩ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় নাগরিক জড়িত থাকতে পারে। তাদেরও আইনের আওতায় আনলে মিলতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ‘আমার বাবার হত্যাকারীদের মধ্যে ভারতেরও যদি কেউ জড়িত থাকে, তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। যেভাবেই হোক, আমার বাবার হত্যার রহস্য দ্রুত উন্মোচন করার দাবি জানাই।’
ডিএনএ পরীক্ষার স্যাম্পল দিতে ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে ডরিন বলেন, ‘বাবার মরদেহ এখনো বুঝে পাইনি। কেন বাবাকে হত্যা করা হলো, তারও সঠিক তথ্য এখনো জানাতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে কারা জড়িত ছিল, সে তথ্যও জানা যায়নি। মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেই আখতারুজ্জামান শাহীনকেও এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। শাহীনের পিএস পিন্টুও ধরা পড়েননি।’
১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের কলকাতায় গিয়ে বন্ধু গোপালের বাসায় ওঠেন এমপি আনার। তার পর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এরপর ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে তিনি খুন হন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তথ্য পেয়ে তদন্ত শুরু করেন।