অনলাইন ডেস্কঃসর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সর্বাত্মক কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। কর্মবিরতির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে দেড় ঘণ্টার জন্য অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। একই দাবিতে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।গতকাল বুধবার অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘অনেকে আমাদের আন্দোলনকে নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
আমরা বলে দিতে চাই, সরকারের বিরুদ্ধে নয়, সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার জন্যই এ আন্দোলন। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছি। আমরা আপনার।’
শিক্ষকরা কবে শ্রেণিকক্ষে ফিরবেন—প্রশ্নের জবাবে জিনাত হুদা বলেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তর একমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছেই।
শিক্ষকসমাজের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা ক্লাসরুমে ব্যস্ত ছিলাম, আমরা একটি স্থিতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম, হঠাৎ করেই আমাদেরকে কারা এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে? এ প্রশ্নের উত্তর প্রশাসনের কাছেই আছে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যখন কাউকে মিডিয়ায় ডাকবেন, তাঁরা যেন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলেন।
এগুলো আমাদের আত্মসম্মানে লাগে।’
গত মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে প্রচারিত বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা জানি এসব বক্তব্য উনারা কেন দেন। এগুলো অপকৌশল। এসব নিজেকে জনপ্রিয় করার প্রয়াস।’‘আলোচনায় বসলে প্রত্যয় স্কিম ধোপে টিকবে না’এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সংবাদদাতা জানান, এই উচ্চ শিক্ষায়তনের শিক্ষকরা বলেছেন, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি শিক্ষকদের জন্য অসম্মানের।
এটা বাতিল করতে হবে। এ জন্য আলোচনায় বসতে হবে। আলোচনায় বসলে প্রত্যয় স্কিম ধোপে টিকবে না। গতকাল দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এটা বাতিল করতে হবে, আলোচনায় বসতে হবে। আলোচনায় বসলে প্রত্যয় স্কিম ধোপে টিকবে না। এটা আমি নিশ্চিত। কারণ আলোচনায় বসা মানেই তাঁরা জানেন, এর পক্ষে কোনো যুক্তি দেখানো যায় না।’শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে শিক্ষাঙ্গনে চলমান স্থবিরতার বিষয়ে এ শিক্ষক নেতা আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, তা আদালতের বিচারাধীন বিষয়। আশা করি, বিষয়টি সুন্দরভাবে সমাধান হবে। আমাদের যে দায়, সেটা হলো আমরা শিক্ষক হয়ে আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্লাসরুমে রাখছি না, তাদের ল্যাবরেটরিতে রাখতে পারছি না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দাবি মেনে নেওয়াটাই এখন যুক্তিযুক্ত।’এ সময় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. মমিন উদ্দিন বলেন, ‘আজ ১০ দিন হয়ে গেল এখনো এ বিষয়ে কোনো সমাধান আসেনি। প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে ফিরলে হয়তো বিষয়টির সমাধান হতে পারে। আমরা ক্লাসে ফিরতে পারছি না, আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাই না শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হোক। আশা করছি সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে, আমরা দ্রুত ক্লাসে ফিরতে পারব।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় উৎসাহিত করতে শিক্ষকদের সামাজিক নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা ঠিক রাখতে হবে। আমাদের আন্দোলন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য।
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে টানা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন দেশের প্রায় ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাঁদের তিনটি দাবি হলো সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তি বাতিল, তাঁদের প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। এ ছাড়া পেনশন স্কিম বাতিল ও ইউজিসি প্রণীত অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।