রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, এমন ঘটনা আগে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এখন এসব কমিয়ে আনা হয়েছে। জনবল সংকটের সুযোগ নিয়ে অনেক কর্মকর্তা এসব প্রশ্রয় দেন। এত নিচের খোঁজ সব সময় ওপর থেকে পাওয়া যায় না। তবে এসব ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
জেনেশুনে নীরব কর্মকর্তারা
এসব ঘটনা জানলেও কর্মকর্তারা অনেকে নীরব থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি এসে যাঁদের পেয়েছি, তাদের বাদ দিইনি। তাঁদের দিয়ে আমার কাজ চলে যাচ্ছে। এখানেও লোকের দরকার।’
রেলওয়ের তথ্য বলছে, পয়েন্টম্যান, খালাসি ও ওয়েম্যানের মতো চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ৪৭ হাজার ৬৩৭টি পদ রয়েছে। এর বিপরীতে বর্তমানে চাকরি করছেন ২৪ হাজার ৪০৩ জন। বাকি ২৩ হাজার ২৩৪টি পদে জনবল নেই। যদিও গত ২৪ ডিসেম্বর ওয়েম্যান হিসেবে এক হাজার ৭৬৭টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে ঢাকার বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, তখন তিনি ঢাকার বিভাগীয় ব্যবস্থাপক পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই আইনের ব্যত্যয়। কিন্তু সেই লোকগুলোকে তো মাঠে না হোক, অফিসের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেও দেখা যেতে পারে।’
জবাবদিহির অভাবে রেলপথে ঝুঁকি বাড়ছে
রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত একটি দলকে কারিগরি ভাষায় ‘গ্যাং’ বলা হয়। একটি গ্যাংয়ের অধীনে দুই থেকে চার কিলোমিটার পর্যন্ত রেললাইনের দায়িত্ব থাকতে পারে। পথের ব্যস্ততা ও লাইনের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে কাজের এলাকা নির্ধারিত হয়। এক দলে পাঁচ থেকে ১২ জন পর্যন্ত সদস্য থাকে।
গ্যাং প্রধানকে মেড বা মিস্ত্রি বলা হয়। দ্বিতীয় ব্যক্তিকে কিম্যান বা চাবিওয়ালা পদে রাখা হয়। এই দলের বাকি সবাই ওয়েম্যান হিসেবে কর্মরত থাকেন। রেলওয়ের এই পদগুলো সবই ব্রিটিশ সরকারের চালু করা। তাই নামগুলোতে ইংরেজির ছোঁয়া এখনো রয়ে গেছে। মূলত যে ব্যক্তি রেলপথে কর্মরত থাকেন, তাঁকে ওয়েম্যান বলে ডাকা হয়।
ওয়েম্যানের কাজ হচ্ছে, রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় কাজ করা। সেই সঙ্গে ট্রেন চলাচলের জন্য রেললাইন যেন উপযোগী থাকে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। আবার দুর্ঘটনা ঘটলে লাইন মেরামত, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনকে মূল লাইন থেকে অপসারণ করার ক্ষেত্রেও ওয়েম্যানরা সরাসরি দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, রোদ, বৃষ্টি, শীত সব পরিস্থিতিতে ওয়েম্যানকে রেললাইনে থাকতে হয়। তাই সুযোগ পেলেই তাঁরা অন্য কাজে সরে যেতে চান। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য থাকে ঢাকায় বদলি হওয়া। তারপর কোনো দপ্তরে ঢুকে যাওয়া।
অবকাঠামো ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ‘এখানে স্পষ্ট যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নৈতিকতা নেই। কোনো জায়গায় যদি অতি যোগ্য লোককে চাকরি দেওয়া হয়, তাহলে তাঁকে দিয়ে সেই কাজ হবে না। যেমনটা অযোগ্য লোককে দিয়েও হবে না। আমরা অতি উন্নয়নের গতিতে অবকাঠামোর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভুল করছি।’
সূত্রঃ কালের কন্ঠ অনলাইন