Tuesday , 22 October 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অতিসরল এক জীবনযাপনের পথ বেঁছে নিয়েছিলেন- উপাচার্য ড. মশিউর রহমান

ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অতিসরল এক জীবনযাপনের পথ বেঁছে নিয়েছিলেন- উপাচার্য ড. মশিউর রহমান

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অতিসরল এক জীবনযাপনের পথ বেঁছে নিয়েছিলেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর- বাংলাদেশ সৃষ্টির নির্দেশনা কেন্দ্র। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ২৫ মার্চের রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষণার অব্যবহিত পরে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার জায়গা। যেই জায়গার নির্দেশনার পরে সারা বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র লড়াইয়ে গেরিলা যোদ্ধায় পরিণত হয়েছিল। আর আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। ২ জুন ২০২৪ তারিখ বিকালে ধানমন্ডিতে ঢাকা মহিলা কলেজের মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একাডেমিক ভবন উদ্বোধন এবং এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।

দেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু মুজিব যিনি লুঙ্গী আর স্যান্ডু গেঞ্জি পরে এই ধানমন্ডিতে নিশ্চিন্তে থাকতেন। নানা গোয়েন্দা সংস্থা, এমনকি বিদেশি শক্তি তাঁকে জানিয়েছিল সতর্ক থাকতে হবে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নতুন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মুজিব সেসব কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন বাঙালির সন্তান আমাকে কিছু করবে না। তিনি এই ধানমন্ডি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে রাজি হইলেন না। এখানেই থাকলেন। এখানে তাঁর সহধর্মিনী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যিনি নিজে দাঁড়িয়ে ধানমন্ডিতে তাঁর বাড়ি করেছেন। ইটের পর ইট গেঁথেছেন। মিস্ত্রি কাজ করেছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজে কাজ করেছেন। শ্রমিকের পয়সা যাতে কম লাগে। খরচটা যাতে কম হয়। স্বামীর অর্থ ব্যয় যাতে কম হয়। নিজ হাতে পানি ঢেলেছেন। একসময় সেই বাড়িতে কবুতার পেলেছেন।  এসব কিছুর মধ্য দিয়ে একজন বাঙালি নারীর যা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তেমন করে তিনি অতিসাধারণ জীবনযাপন করেছেন। ক্ষমতার দম্ভ তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র ছিল না। বরং যতবেশি ক্ষমতার মধ্যে এসেছেন ততবেশি সরল জীবনযাপন করেছেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁর সন্তানদেরও তাই শিখিয়েছেন। সে কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন নির্লোভ, সৎ, সাহসী, দেশপ্রেমিক জীবনযাপন করেন। এই সব করবার জন্য নিশ্চয়ই তাঁর মধ্যে একটি দীক্ষা রয়েছে। দীক্ষাটি হচ্ছে- বাঙালির মুক্তি। আমাদের সন্তানেরা যাতে আগামী দিনে সুশিক্ষিত হয়, ভালো নাগরিক হয়, সেকারণে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, নানা স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি যেখানে বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেল মায়ের চোখকে আড়াল করে সাইকেল চালাতে বের হতেন। ধানমন্ডির অলিতে-গোলিতে বঙ্গবন্ধুর ছেলে যখন সাইকেল চালাতে নামতেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চোখ তখন সড়কে থাকত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে এখানে হত্যা করা হয় জাতির পিতাকে। এখান থেকেই গোপালগঞ্জে নিভৃত পল্লীতে তাঁকে দাফন করা হয়, যেন বাঙালি চিরদিনের জন্য জাতির পিতাকে ভুলে যায়। কিন্তু ইতিহাসের বিচার ঠিক তার উল্টো হয়েছে। ধানমন্ডি থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় যে যোগসূত্রতা তৈরি হয়েছে তা বাঙালির ইতিহাসের এক ভিন্ন ধারা। ইতিহাসের বিচারে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া বাঙালির তীর্থে পরিণত হয়েছে।  ৩২ নম্বরের সেই ধানমন্ডি আজ জনগণের জন্য উন্মুক্ত। বঙ্গবন্ধুর সেই রক্তচিহ্ন দেখার জন্য মানুষ লাইনে দাঁড়ায়, শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সেকারণেই বাঙালির কাছে ধানমন্ডির এক ভিন্ন আবেদন আছে। এই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা  মহিলা কলেজ আজকে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব একাডেমিক ভবন উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে মুজিব এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে স্মরণ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অধ্যয়নের আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, নিয়মিত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা অধ্যয়ন করবে। পড়ালেখার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তোমাদের বিচরণ থাকতে হবে। তোমরা নিজেদের আদর্শবান, মানবিক ও  দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে তৈরি করবে। তোমরা ই-বুক, ই-জার্নাল একসেস নিশ্চিত করবে। তোমাদের হাতের মুঠোয় যে ডিজিটাল ডিভাইসটি রয়েছে সেটি যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করবে। পাঠগ্রহণের অনেক ম্যাটারিয়ালস তোমরা ওই মুঠোফোনে পাবে। একটি মুহুর্তও তোমরা অপচয় করবে না। কারণ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তোমাকে টিকে থাকতে হলে দক্ষতা অর্জনের  কোনো বিকল্প পথ নেই।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির নানা কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে। এসব সুযোগ আপনাদের গ্রহণ করতে হবে। মেন্টাল হেলথ, জিআইএস, আইসিটি, প্যাডাগোজি, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ সকল সুবিধা আপনারা গ্রহণ করবেন। আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ও গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রেরণ করবেন। তাদের লেখা-পড়ার দায়িত্ব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। আমরা চাই না আমাদের কোনো শিক্ষার্থী অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে পারবে না। ঢাকা মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, ডা. মো. মনোয়ার হোসেন, মো. মোমেন সরকার, রিয়াজ আহমেদ প্রমুখ।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply