রোগীর সুস্থতার জন্য চিকিৎসকরা বিভিন্ন ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতাল এলাকা থেকে সংগৃহীত ফল পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে না খাওয়ায় অনেকেই উল্টো বিভিন্ন জীবাণুু দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে। দেশীয় চিকিৎসকদের এ গবেষণায় দেখা গেছে, ফলে থাকা ২৭ ধরনের জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একদল চিকিৎসক হাসপাতাল এলাকায় ফলের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণের এ গবেষণাটি করেছেন।
সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার বলেন, হাসপাতালে ভর্তির ৭২ ঘণ্টা পর রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, তারা এক ধরনের জীবাণু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অন্য জীবাণু দ্বারা নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে। এতে একদিকে রোগীদের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগছে। অন্যদিকে চিকিৎসা খরচ ও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে, মোট ২৭টি নমুনার সবটিতেই রোগ তৈরি করার মতো জীবাণু পাওয়া গেছে। এসব জীবাণুর মধ্যে ৫২ শতাংশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হলেও ৪৮ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।
কিভাবে ফল জীবাণুমুক্ত করা যাবে
ডা. কাকলী হালদার বলেন, প্রবাহিত পরিষ্কার পানি দিয়ে অনেকক্ষণ ধোয়ার পর জীবাণু থাকার তেমন কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। তবে হাসপাতালে সুবিধা কম থাকে বলে ফল বাড়ি থেকে ভালোভাবে ধুয়ে কেটে নিয়ে আসা সবচেয়ে উত্তম। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো হাত ধুয়ে ফল খাওয়া। শুধু হাত ধোয়ার কাজটি যদি সঠিকভাবে করা যায় তাহলে ৫০ শতাংশ সংক্রমণ কমানো সম্ভব। কিন্তু তা বেশির ভাগ লোকই মানে না।
ঢাকা মেডিক্যালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাজ্জাদ বিন শহীদ জানান, শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু প্রবেশের ফলে মূত্রনালিতে বা শ্বাসনালিতে সংক্রমণ, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ডায়রিয়া বা রক্তে নানা সংক্রমণ হতে পারে।
সাজ্জাদ বিন শহীদ বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিনগুলো পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে সেগুলো নানাভাবে মিশে যায় দোকানের ফলে। এ ফল যারা খাবে তাদের শরীরে ওই জীবাণু প্রবেশ করে। এতে ওই ফল খেয়েই তারা নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিবায়োটিকে প্রতিরোধী হয়ে যাবে। ফলের গায়ে লেগে থাকা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী এসব জীবাণু সাধারণত হাসপাতালেই পাওয়া যায়।
সংক্রমণ ঠেকাতে করণীয় কী
সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার বলেন, ‘কমিউনিটিতে ছড়ানো জীবাণুর তুলনায় হাসপাতালে থাকা জীবাণু অনেক বিপজ্জনক। এ জন্যই আমরা শিশু ও বৃদ্ধ মানুষদের চিকিৎসা ছাড়া হাসপাতালে আসতে নিরুৎসাহিত করি। কারণ এরা সংক্রমিত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে থাকে।’
কাকলী হালদার বলেন, হাসপাতালে থাকার সময় রোগী ও স্বজনদের যতবার সম্ভব হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। রোগীর বিছানার আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। রোগীর একজনের বেশি স্বজন হাসপাতালে থাকা উচিত নয়। এ ছাড়া রোগীর কক্ষে প্রবেশের আগে মাস্ক পরা, বাজারঘাট ঘুরে এসে রোগীর কক্ষে না যাওয়া, রোগীকে জড়িয়ে ধরা থেকে বিরত থাকা, রোগীর সঙ্গে হাত মেলানো বা গায়ে হাত বোলানো এবং তার বিছানায় বসা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
রোগীকে কোনো কারণে একান্ত স্পর্শ করতে চাইলে আগে-পরে সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। অস্ত্রোপচার হওয়া রোগী থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। স্পর্শ তো করাই যাবে না। বিশেষ করে বাড়তি লোকের ভিড় অস্ত্রোপচারের রোগীর জন্য খুব ক্ষতিকর। এতে তার সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।