দেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে শহরে অনেক বেশি। ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে প্রতি ১০০ জনে তিনটি শিশুর অটিজম রয়েছে। গ্রামে গড়ে প্রতি ৭০০ জনে একজন। অর্থাৎ গ্রামের চেয়ে শহরে অটিজম শনাক্তের হার ২১ গুণ বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিস-অর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘অটিজমের কারণ জানতে আমরা বেশ কিছু গবেষণা করেছি। এতে দেখা গেছে, অটিজম মূলত জিনগত সমস্যা এবং পরিবেশগত কারণে এর মাত্রা বাড়ে। একসময় মনে করা হতো, ভিটামিন ডির ঘাটতি থাকার কারণে অটিজমের মাত্রা বাড়তে পারে। কিন্তু গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বায়ুতে সিসার মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেছি, কিন্তু এটি অটিজমের কারণ হিসেবে সম্পর্কযুক্ত মনে হয়নি। তবে বিভিন্ন জরিপে শহর অঞ্চলে অটিজমের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। এর কারণ হিসেবে শহরে পরিবেশগত কিছু সমস্যাকে ধরা হয়।’
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বিএসএমএমইউয়ের অধীনে তিন বছরের কম বয়সী অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ওপর করা এক জরিপে দেখা গেছে, অটিজমের মাত্রা এক হাজারে ১৭ জন। অটিজম আক্রান্ত চারজন ছেলে হলে একজন মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে।
অটিজম সমস্যার ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় আনা যাচ্ছে না কেন
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অটিজম নিয়ে বাংলাদেশের একটি কর্মকৌশল রয়েছে। তাদের মূলধারায় নিয়ে আসতে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা বিশ্বের কাছে একটা উদাহরণ। তবে নীতির জায়গায় আমরা যত দূর এগিয়েছি, কাজের জায়গায় ততটা এগোতে পারিনি।’
ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই অটিজমে আক্রান্ত যে শিশু ও ব্যক্তিরা রয়েছে তারা মূলধারায় আসুক। তারা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখুক এবং তাদের অধিকার নিয়ে মূলধারার মানুষের সঙ্গে বেঁচে থাকুক। কিন্তু সমস্যা হলো সামাজিক কুসংস্কার; অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। কোনো একটি একক প্রতিষ্ঠান, বিভাগ বা ব্যক্তির পক্ষে এটির সমাধান করা সম্ভব নয়। এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তেমনি সমাজসেবা, শিক্ষা ও সুধীসমাজের গুরুত্ব রয়েছে। সংবাদমাধ্যমেরও গুরুত্ব রয়েছে। সবাইকে একসঙ্গে রেখে যদি কাজ করা যায়, তাহলে এটি কার্যকর হবে।’
অটিজম লক্ষণ প্রকাশ পায় দেড় থেকে তিন বছর বয়সে
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, গড়ে প্রতি ১২৫ শিশুর মধ্যে একজন অটিজমের উপসর্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগে দেড় থেকে তিন বছর।
ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, এসব শিশু অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশতে চায় না, একা থাকতে পছন্দ করে, একা একা নির্দিষ্ট কিছু জিনিস নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। স্বাভাবিক শিশুরা যে ধরনের খেলাধুলা করে, অটিজম আক্রান্তরা সে ধরনের খেলাধুলা করে না। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা বোতল, ব্রাশ বা কাগজের টুকরা নিয়ে খেলাধুলা করে। এ ধরনের শিশুদের নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় কম, চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। তারা বেশি রাতে ঘুমাতে চায়। এদের হজমের অসুবিধা থাকে। কখনো কখনো তারা অধিক পরিমাণে হাইপার থাকে। অনেক সময় কারো কারো খিঁচুনি ও মৃগী রোগ দেখা দেয়।