সিলেটের পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র বলেছে, ঈদের পাঁচ দিন নিয়মিত তিন হাজার বাসে যাত্রী পরিবহন হবে। প্রতিটি বাসে গড়ে ৪০ জন যাত্রী হলেও দিনে এক লাখ ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। তাতে পাঁচ দিনে ছয় লাখ মানুষ শুধু বাসেই সিলেট ছাড়বে।
ট্রেনও সিলেট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। এখানকার মানুষ বিভাগের ভেতরে যাতায়াতেও ট্রেন ব্যবহারে অভ্যস্ত। আর আছে ভাড়া ও ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের প্রচলন। ময়মনসিংহ মহানগর ছাড়বে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। তাদের বড় অংশই কর্মজীবী ও শিক্ষার্থী। জেলা ও আশপাশের প্রচুরসংখ্যক শিক্ষার্থী এই শহরে থেকে লেখাপড়া করে।
ঢাকা ছাড়বে বেশি মানুষ
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা ছাড়বে প্রায় এক কোটি মানুষ। তাদের বেশির ভাগই যাবে বাসে। ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি ও ভাড়ার মাইক্রোবাসের চাহিদা রয়েছে।
রাজধানী থেকে দূরপাল্লায় প্রায় ১০ হাজার বাস যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। গড়ে প্রতিটি বাস দিনে দুই ট্রিপ দেবে। প্রতি বাস গড়ে ৪০ জন যাত্রী পরিবহন করবে। সে হিসাবে দিনে গড়ে আট লাখ, পাঁচ দিনে ৪০ লাখ মানুষ বাসে ঢাকা ছাড়বে।
এসব যাত্রীর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। অনেক কারখানার শ্রমিক নিজেরাই বাস ভাড়া করবেন। যদিও এবার আনফিট বাস রিজার্ভ করে ঢাকার বাইরে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
বাংলাদেশ সরক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাসে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে সিটি সার্ভিসের বাস চলতে দেওয়া হবে না। কোনো আনফিট বাসও সড়কে চলতে দেওয়া হবে না।
নৌপথে ৬০ লাখ
রাজধানীর সদরঘাট থেকে প্রতিদিন ছেড়ে যাওয়ার মতো বড় লঞ্চ রয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি। এর সঙ্গে কিছু ছোট লঞ্চও যুক্ত হবে। এবারের ঈদ যাত্রায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১২০টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি লঞ্চের গড় ধারণক্ষমতা দেড় হাজার যাত্রী। এবার নৌপথে ১৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘এখনো লঞ্চের যাত্রীর চাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বরিশাল, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীর যাত্রী বেশি কমলেও অন্য রুটের যাত্রী তেমন কমবে না। যাত্রী পাওয়ার আশায় আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় ৬০ লাখ মানুষ নৌপথে উপকূলীয় এলাকায় যাবে বলে মনে করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর মধ্যে দিনে গড়ে তিন লাখ করে ৯ দিনে অন্তত ২৭ লাখ মানুষ সদরঘাট হয়ে যাবে।
ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের প্রায় ৩৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নৌপথে যাত্রা করবে। এর প্রায় শতভাগই উপকূলীয় জেলা বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের যাত্রী।
মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়িতে ৪৭ লাখ
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ঈদ ঘিরে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে ১২ লাখ ট্রিপ হবে। এ ছাড়া মাইক্রোবাস, মিনিবাস ও বিভিন্ন অফিসের গাড়িতে চার দিনে প্রায় ৩৫ লাখ যাত্রী ঢাকা ছাড়বে। এর সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়িও যুক্ত হবে।
সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আন্ত জেলা পর্যায়ে ঈদে যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে ১৫ লাখের বেশি ইজি বাইক, রিকশা, অটোরিকশা সড়কে নামতে পারে। এসব ছোট যানবাহন মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের গতি কমিয়ে যানজট তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেবে।
রেলে যাবে ৪ লাখ যাত্রী
আন্ত নগর, লোকাল, কমিউটার ও বিশেষ ট্রেন মিলিয়ে ঢাকা থেকে প্রতিদিন আসনের হিসাবে পরিবহন করা যাবে ৫০ হাজার যাত্রী। সেই হিসাবে পাঁচ দিনে আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। তবে এর সঙ্গে আরো প্রায় আড়াই লাখ মানুষ দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে বলে ধারণা করেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
রেলওয়ে সূত্র বলেছে, স্বাভাবিক সময়ে সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করে। ঈদের সময় এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ঈদের আগের পাঁচ দিনে ১০ লাখ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করবে। আর যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে, ঈদের আগে চার দিনে ঢাকা থেকে চার লাখ মানুষ ট্রেনে চড়ে নিজ গন্তব্যে রওনা দেবে।
উড়োজাহাজের যাত্রী প্রায় ১ লাখ
অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, এয়ার এস্ট্রা ও নভো এয়ার যাত্রী পরিবহন করে থাকে। বিমান সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ঈদের আগের পাঁচ দিনে এসব বিমানে ৩০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করা হবে। সাতটি রুটে প্রতিদিন গড়ে ৩৫টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। প্রতিটি ফ্লাইটে গড়ে ৭৫টি করে আসন আছে।
কিন্তু ঈদ যাত্রা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, দেশের ভেতরে ঈদকে কেন্দ্র প্রায় এক লাখ মানুষ উড়োজাহাজে যাতায়াত করবে।
খোলা ট্রাকেও ঘরে ফিরবে লাখো মানুষ
শুধু বাস, লঞ্চ, ট্রেন, মোটরসাইকেল বা মাইক্রোতেই সরাসরি মানুষ ঢাকা ছাড়বে তা নয়, এর বাইরেও বহু মানুষ ভেঙে ভেঙে পথ পাড়ি দেবে। পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকেও শেষ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়ার নজির রয়েছে। তবে সেই বেহিসাবি খাতের হিসাব পাওয়া যায় না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির ধারণা, বাস ও ট্রেনের ছাদ এবং পণ্যবাহী খোলা ট্রাকে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ যাত্রী হিসেবে ভ্রমণ করবে।
ঈদের সড়কে দুর্ঘটনার শঙ্কা
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে (২০২৩ সালের ১৬ থেকে ২৯ এপ্রিল) দেশে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে আরো ৪৫৪ জন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ওই সময় ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ৩২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আরো অন্তত ৫৬৫ আহত হয়েছে। এবারও ঈদের সড়কে দুর্ঘটনার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, অব্যবস্থাপনা, মহাসড়কে অসম গতি, অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হচ্ছে। দুর্ঘটনা কমাতে হলে মহাসড়ক থেকে তিন চাকার ছোট যান বন্ধ করতে হবে। চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে।