মার্চ মাস মহান স্বাধীনতার মাস। স্বাধীনতা মহান আল্লাহর নিয়ামত। বর্তমান বিশ্বে তিব্বত, সিকিম, হংকং, আরাকান নামের কোনো স্বাধীন দেশ নেই। তামিল, কাশ্মীর আন্দোলন, পাঞ্জাবের ‘খালিস্তান’ সংগ্রামে কম রক্ত ঝড়েনি।
মুসলিম চেতনায় রমজান রহমতের অমীয় সুধা ও ইবাদতের ফল্গুধারা নিয়ে আসে, যেন চির বসন্তের দোলা। সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ লেখেন, ‘…কি কঠোর কৃচ্ছ্র ও সংযম সাধনা। একটানা ৩০ দিনের উপবাস। দিনে রোজা, আর রাতে ইবাদত।
কমান্ডার মো. রহমতুল্লাহর ভাষ্যমতে, ‘সেদিন ছিল পয়লা রমজান। আগেই সাহরি খেয়ে নিয়েছি। সব যোদ্ধাকে প্রস্তুত হতে আদেশ দিলাম। যথাসময়ে ১০-১২টি ট্রাক এসে পড়ল। তুরা পার হওয়ার পর ইফতারের সময় হলো, ট্রাকেই আছি। কারো কাছে ইফতার করার মতো কোনো খাবার, এমনকি পানি পর্যন্ত ছিল না। আমার পকেটে সিগারেট ছিল, অগত্যা তা দিয়েই ইফতার (জানতাম না এটি ইসলাম সমর্থন করে কি না)।…সারা দিন রোজা রাখা, ইফতারের পর ক্ষুধা বোধ করলাম। চারদিকে শুধু পাহাড়-জঙ্গল-অন্ধকার, ভাগ্য ভালো, স্কুলে হারিকেনজাতীয় বাতি ছিল। রাত যখন ১০টা তখন রুটি-ডাল এলো, সবাই খেয়ে নিলাম।’ (কম্পানি কমান্ডার, সেক্টর ১১, একাত্তরের ডায়েরী, সুফিয়া কামাল)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুল হোসেন (বীর-উত্তম)সহ আটজন মুক্তিযোদ্ধা রাতে আগেভাগে সাহরি খেয়ে নিলেন। তাঁরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক প্রতিরক্ষা অবস্থানে মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ করবেন। রাতের অন্ধকারে দ্রুত এগিয়ে চললেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, লক্ষ্যস্থলে যাওয়ার আগেই তাঁরা নিজেরাই পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের মুখে পড়লেন। অতর্কিত মর্টার আক্রমণে থমকে গেল তাঁদের অগ্রযাত্রা।…পাকিস্তানিরা তাঁর চোখের সামনেই দুই সহযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করল আর তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলল। এরপর তাঁর ওপর শুরু হলো নির্দয় নির্যাতন। নিষ্ঠুর নির্যাতনেও তিনি পাকিস্তানিদের কোনো তথ্য দিলেন না। পরে সেনারা তাঁকেও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হত্যা করে। (একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা-১ম খণ্ড, প্রথমা প্রকাশন)
জয়বাংলা পত্রিকায় ‘এই ঈদে আমাদের প্রার্থনা হোক’ শিরোনামে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাণী এমন ছিল—‘এবার ঈদ এসেছে অত্যন্ত মর্মান্তিক পরিবেশে।…এবার ঈদে আনন্দ মুছে গেছে আমাদের জীবন থেকে, আছে শুধু স্বজন হারানোর শোক, দুর্জয় সংগ্রামের প্রতিজ্ঞা ও আত্মত্যাগের প্রবল সংকল্প।…আমরা সকলে যেন নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের নিয়োগ করতে পারি, এই ঈদে তাই হোক আমাদের প্রার্থনা।’
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ
কাপাসিয়া, গাজীপুর