আজ ৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি’। দিবসটি গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার সুহৃদদের জন্য উৎসবের দিন।
২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা একটি পরিপত্র জারি করে, যার মর্মার্থ—সরকার ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষণা করেছে এবং এই তারিখকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ হিসেবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালনসংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত পরিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘বই পড়ি, স্বদেশ গড়ি’, ২০১৯ সালে ‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, আলোকিত মানুষ গড়ি’, ২০২০ সালে ‘পড়ব বই গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’, ২০২১ সালে ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, ঘরে ঘরে গ্রন্থাগার’, ২০২২ সালে ‘সুবর্ণ জয়ন্তীর অঙ্গীকার, ডিজিটাল গ্রন্থাগার’, ২০২৩ সালে ‘স্মার্ট গ্রন্থাগার, স্মার্ট বাংলাদেশ’।
পাঠক তৈরির মূল উৎস হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা—প্রাথমিক বিদ্যালয় এক লাখ তিন হাজার ৩০২, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুই হাজার ৪৫৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬ হাজার ৪০৮, স্কুল অ্যান্ড কলেজ এক হাজার ৪০৫ এবং কলেজ তিন হাজার ৩১৯।
প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাডেমিক গ্রন্থাগার নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক, গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করা দরকার, সিলেবাস ও রুটিনে ‘তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এই নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়।
তবে পাঠকের অবগতির জন্য বলছি, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৮টি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৮টি।
মাধ্যমিক স্কুল স্তরে গ্রন্থাগারে কমপক্ষে দুই হাজার বই থাকতে হবে। রুটিনে ‘তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে তা পরিপালন করা হয় না। সরকার ২০১০ সালে মাধ্যমিক স্কুল/দাখিল মাদরাসায় সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি করেছে।
পদটি এমপিওভুক্ত। গ্রন্থাগারিকদের দাবির মুখে এক পর্যায়ে পদ পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘সহকারী শিক্ষক-তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’। কিন্তু অনেক বিদ্যালয়ে পদটি খালি পড়ে আছে। আবার কোনো কোনো স্কুল/মাদরাসায় গ্রন্থাগারিক থাকলেও তাঁদের প্রক্সি ক্লাস বা অন্যান্য কাজে নিয়োজিত রাখা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগার পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না পাঠক বা বইপ্রেমী। মাধ্যমিক স্তরেও তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা কোর্স সিলেবাসভুক্ত করা দরকার।
কলেজ/সমমানের মাদরাসায় একাডেমিক লাইব্রেরি বাধ্যতামূলক। সেখানে গ্রন্থাগারিকের পদ হলো ‘প্রভাষক-তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’। কলেজ স্তরে বিষয়টি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। অনেক কলেজে গ্রন্থাগার আছে নামমাত্র। আবার যেসব কলেজে গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগারিক আছে, সেখানে বই ইস্যু করা হয় না, গ্রন্থাগারিক অলস সময় পার করেন কিংবা তাঁকে অন্য কাজে লাগানো হয়। ফলে গ্রন্থাগারের সঙ্গে শিক্ষার্থী/পাঠকের সংযোগ গড়ে ওঠে না। বই পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের অনুরাগ জন্মায় না।
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—বইপাঠ প্রতিযোগিতা (১ ফেব্রুয়ারি), চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা (২ ফেব্রুয়ারি), রচনা প্রতিযোগিতা (৩ ফেব্রুয়ারি), উপস্থিত বক্তৃতা (৪ ফেব্রুয়ারি), উদ্বোধন, আলোচনাসভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (৫ ফেব্রুয়ারি)।
বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে—ক. জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন বিষয়ে ব্যানার স্থাপন; খ. বইকেন্দ্রিক আলোচনা ও উৎসব; গ. সবার মাঝে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে উৎলি/শোভাযাত্রা; ঘ. শিশু-কিশোর পাঠকদের বই উপহার; ঙ. পাঠচক্র; চ. পাঠ প্রতিযোগিতা এবং ছ. বিদ্যালয়ভিত্তিক বই পড়া কর্মসূচি আয়োজন।
নতুন করে গড়ে উঠুক গ্রন্থাগার আন্দোলন। প্রয়োজনে গ্রন্থাগার স্থাপনে আগ্রহীদের পরামর্শ দিয়ে বইপাঠে সাধারণ নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার