অনলাইন ডেস্কঃসাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার বিচার নিয়ে হতাশ না হতে আশ্বস্ত করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের আসল অপরাধীদের ধরে তাদের অবশ্যই বিচার করা হবে। এই হত্যার বিচারটা হারিয়ে যাবে না।রবিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধনের পর দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
এক সাংবাদিক আইনমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, সাগর-রুনি পরিবার হতাশা ব্যক্ত করে বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পূর্ণ হতে যাচ্ছে। মামলাটির তদন্ত করছে র্যাব। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ১০৫ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের সিআইডি বা পিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হবে কি না?
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, এই হত্যাকাণ্ডের আসল অপরাধীদের ধরে তাদের অবশ্যই বিচার করা হবে। এই হত্যার বিচারটা হারিয়ে যাবে না, এটাও আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর আমাদেরও কিন্তু এ রকম একটা হতাশা ছিল। হতাশা আরো গাঢ় ছিল।
তার কারণ হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারে আসার পর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে, দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে, বিচারকার্য শেষ হয়েছে। এই বিচারকার্য শেষ হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে। সেই সূত্র ধরে আমি বলব, সেই (বিচারহীনতার) অপসংস্কৃতি আর নাই যে, কোনো হত্যাকাণ্ড বিচার ছাড়া আমাদের মন থেকে হারিয়ে যাবে। যারা হতাশ হয়েছেন, তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবেই।
তদন্তকারী সংস্থার পরিবর্তন নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়ার জন্য যে যে পদক্ষেপ সরকারের নেওয়া উচিত, নিশ্চয়ই সরকার সেটা নেবে। যদি মনে হয়, র্যাবের তদন্তের জায়গাটা পরিবর্তন করা দরকার, অবশ্যই আমরা সেটা করব। কিন্তু র্যাব যেটা করছে, সেটা র্যাবের ব্যর্থতা বলে আমার মনে হয় না। ঘটনাটা যেভাবে ঘটেছে, সেটা যেকোনো ইনভেস্টিগেটিং অ্যাজেন্সির জন্য একটু কঠিন। এ জন্যই আমি বলব, একটু অপেক্ষা করা প্রয়োজন।’২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরওয়ার মেঘকে উদ্ধৃত করে পুলিশ তখন জানিয়েছিল, খুনি ছিল দুজন।আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বছরের পর বছর গড়ালেও হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি।এ হত্যার ঘটনায় ‘তদন্তের জন্য প্রয়োজনে ৫০ বছর সময় দিতে হবে’- এমন শিরোনামে আইনমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম গত ১ ফেব্রুয়ারি খবর প্রকাশ করে। পরদিন সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ নিয়ে কথা বলেন আইনমন্ত্রী। ৫০ বছর সময় দেওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক অর্থে বলেছেন বলে দাবি করেন আনিসুল হক।
সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ গত ২৩ জানুয়ারি আবারও পেছানো হয়। তদন্ত সংস্থা র্যাবের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল সেদিন। কিন্তু প্রতিবেদন দাখিল না করায় আগামী ২৭ জানুয়ারি নতুন তারিখ রাখেন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. শফিউদ্দিন। এ নিয়ে ১০৫ বারের মতো এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পেছাল।