আজ ১৯ জানুয়ারি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, সচেতনতা তৈরিসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই কমিটি। এ নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
প্রশ্ন : যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সামনে রেখে এই ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি করেছেন, তার কতটুকু অর্জিত হয়েছে?
শাহরিয়ার কবির : গোলাম আযমসহ গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমরা ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ জন বিশিষ্ট নাগরিক মিলে একটি ঘোষণা দিলাম।
নতুন প্রজন্ম, অর্থাৎ যুদ্ধোত্তর প্রজন্ম পঁচাত্তরের পর যাদের জন্ম হয়েছিল, তারা দীর্ঘ সময় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অন্ধকারের মধ্যে ছিল। এই প্রজন্মকে আলোকিত করেছে জাহানারা ইমামের আন্দোলন। মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা ও বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানিত করার আন্দোলনও নির্মূল কমিটিই করেছে।
প্রশ্ন : যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু হওয়ার পরও বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্মূল কমিটির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে বলে মনে করেন?
শাহরিয়ার কবির : না না। প্রয়োজনীয়তা কেন ফুরাবে? আমাদের মূল দাবি তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন। আমাদের সমন্বয় কমিটির নামই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। বিচারের পর্বটা আংশিক সম্পন্ন হয়েছে, পুরোপুরি নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত ১২ বছরে ১০০-র বেশি বিচার হয়েছে এবং অনেকের দণ্ড কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এখনো সংগঠন ও পাকিস্তান হাইকমান্ডের বিচার হয়নি। সেটা আমাদের দাবি রয়েছে, ট্রাইব্যুনাল চলমান থাকলে সেটাও হবে।
প্রশ্ন : প্রাথমিক অবস্থায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে তৈরি সংগঠনটি পরবর্তী সময়ে গণমানুষের সংগঠন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন?
শাহরিয়ার কবির : হ্যাঁ, এর একটা প্রমাণ হচ্ছে ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চ। একেবারেই তরুণ প্রজন্ম এটা করেছে। অনেকে জাহানারা ইমামকে চোখেও দেখেনি। তখন শাহবাগ চত্বরে একটাই বিশাল প্রতিকৃতি ছিল, সেটা জাহানারা ইমামের। আমরা প্রতিটি নির্বাচনে বলেছি, রাজাকারমুক্ত সংসদ চাই। ১৯৯১ সালে জামায়াতের নেতা সংসদে ছিল ১৮ জন। ১৯৯৬ সালে সেই সংখ্যা কমে তিনে দাঁড়াল। সেটা আমাদের আন্দোলনের কারণেই হয়েছে।
প্রশ্ন : কমিটির বেশ কিছু লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, এখনো চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিটির লক্ষ্য কী? এখন আপনারা কী নিয়ে কাজ করবেন?
শাহরিয়ার কবির : সরকারের ভুলত্রুটি হলে তার সমালোচনা করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় ধরে রাখতে হবে। বিভিন্ন সময় হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা করা, মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস করা—এসব থেকে সরকারকে দূরে রাখতে হবে। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। নতুন সরকারের কাছে আপনার কী প্রত্যাশা ও পরামর্শ থাকবে?
শাহরিয়ার কবির : আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে হবে। এটা করতে গেলে জামায়াত বা কোনো ধর্মাশ্রয়ী দলকে ছাড় দেওয়ার কিছু নেই।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ