দেশের বড় ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা, অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের ব্যবসার পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলেছে। তবে বিগত সময়ের চেয়ে অবকাঠামো, ঋণসহায়তাপ্রাপ্তি এবং অস্থায়ী নীতি সহায়তায় বিষয়ে সামান্য কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২৩ : উদ্যোক্তা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
আজ বুধবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের সেবা, শিল্প, কৃষি, উৎপাদন খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭১ জন গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে করা এ মতামত জরিপে অংশ নেন।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, শতভাগ বড় ব্যবসায়ীর জন্য প্রধান সমস্যা দুর্নীতি, মাঝারি ৬১% ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে সমস্যা মনে করছেন এবং ৫৬ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন।
আবার ছোট ছোট সরকারি সেবার ক্ষেত্রে ৮৫% ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমস্যায় পড়ছেন, যেখানে বড় ব্যবসায়ীদের সমস্যা এসব ক্ষেত্রে কিছুটা কম।
সিপিডি বলছে, গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা বড় ব্যবসায়ীদের বেশি প্রভাবিত করেছে। ৬২% বড় ব্যবসায়ীদের জন্য এ বিষয়টি প্রতিবন্ধকতা ছিল, যেখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছিল ৩৮ শতাংশ। রিজার্ভের কারণে বড় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে এ সময়।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে। আগে যেমন ঋণপ্রাপ্তি অবকাঠামোর মতো বিষয় নিয়ে তাদের অধিক চিন্তিত থাকতে হতো, এখন তাদের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি, রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এতে কিছু ব্যবসায়ীর সক্ষমতাও বেড়েছে, তবে মোটাদাগে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী সমস্যার মধ্যে পড়ছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে দুর্নীতিসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে সার্বিকভাবে কিন্তু আমাদের গত বছরের উৎপাদন, তার আগের বছরের উৎপাদনের তুলনায় অনেকটা কমেছে। গত বছর ব্যবসায়ীরা ভালো করেছেন, এমন সংখ্যা খুবই কম।
ডলার সংকটে অনেকে কাঁচামাল কিনতে পারেননি। অনেকে আমদানি করতে পারেননি, বাজারে সরবরাহ করতে পারেননি।’
জরিপে আরো উঠে এসেছে, এশিয়ায় ব্যবসায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশই বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। ভিয়েতনাম সব সূচকে বাংলাদেশের ওপরে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার বিবেচনায়ও বাংলাদেশ এগিয়ে নেই। টেকসই অর্থনীতি বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের পরই বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সূচক ভালো বলা যাবে না।
ব্যবসায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে জরিপে বলা হয়েছে, ৬৬.২০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন আগামী দুই বছর জ্বালানিসংকটে ভুগবেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ৫৮ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করছেন, ব্যাংকিং খাতে নজরদারি ও তদারকির অভাব রয়েছে। ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন, ডলারসংকটের কারণে তারা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বারবার বললেও সেটা যথাযথভাবে আমলে নেয়নি সরকার। বৈশ্বিকভাবেই জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে এলএনজি আমদানি বড় সংকট তৈরি করেছে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত জ্বালানিসংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রাধান্য দেওয়া।’
তিনি বলেন, অর্থপাচার একটা ব্যাপক স্তরে রয়েছে। অর্থপাচার ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ। ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, এখনো ২৩% কর ফাঁকি হচ্ছে।