আবারও নৌকা মার্কাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে দেশের সেবা করার সুযোগ চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আসুন, সবাই মিলে এই বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি।’
১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং ইন্ধন জোগাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদী, খাল, পুকুর, জলাধার খনন, ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ, বনায়ন সৃষ্টি, উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করে সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙনের হাত থেকে দেশের জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করব। সড়ক, রেল, নৌ, বিমানপথ ও সেবা উন্নত করে যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, অধিক ফসল উৎপাদন, খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্য ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা, দেশের চাহিদা পূরণ করা ও বিদেশে রপ্তানির উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে নতুন বাজার খুঁজে বের করা, উপযুক্ত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। সে ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, ওষুধ, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারী শিল্প উৎপাদন, জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ রিসাইক্লিনং শিল্প, ও কারখানা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। ব্যাপক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এই লক্ষ্যে কৃষিপণ্য, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিজ্ঞান, পরমাণু গবেষণা, অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন গবেষণা, সমুদ্র গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণার জন্য ইনস্টিটিউশন ও গবেষণাগার তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে দেশ পরিচালনায় যে সাফল্য আমরা করতে পেরেছি তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ২০২৪ সাল থেকে স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তোলার ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছি।’
এবারের ইশতেহারে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্য থেকে যে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিষয়গুলো হলো—১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার করা। ২. দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার আওতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ৩. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৪. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৫. উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা যান্ত্রিকীকরণ ও উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া। ৬. কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে তোলা। ৭. গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত অবকাঠামো এবং শিল্প-কলকারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ৮. ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৯. নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ১০. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করে ব্যক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১১. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলা ও তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ১২. সাম্প্রদায়িকতা ও সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জনকল্যাণমুখী ও সুসমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণের পথে জাতিকে অগ্রসরমান রেখেছে। এরই মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা শুরু হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার যে সুযোগ পাওয়া যাবে তা কার্যকর করা এবং যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই মোকাবেলা করতে পারবে। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। সম্ভাবনাময় বিশাল তরুণ সমাজ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল কারিগর। তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি।’
এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন যে সংগ্রাম করেছেন, সে কথা তুলে ধরে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে দুঃখ-বেদনাকে সম্বল করে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের মাঝে খুঁজে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের মমতা এবং ভাইয়ের মায়া। আপনারাই আমার পরিবার, আমার ওপর ভরসা রাখুন। আসুন, সকলে মিলে এই বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণ করি।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষ করেন কবি সুকান্তের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে। তিনি বলেন, “আমাদের ডাক এসেছে/এবার পথে চলতে হবে।/ডাক এসেছে চলতে হবে আজ সকালে/বিশ্বপথে সবার সাথে সমান তালে।/পিছন পানে তাকাস নি আজ, চল সম্মুখে/জয়ের বাণী নূতন প্রাতে বল ও-মুখে।”
নারায়ণগঞ্জে এ কে এম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : বাসস
নারায়ণগঞ্জের ইসদাইর এলাকায় এ কে এম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্টেডিয়ামে গতকাল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় জনতার একাংশ।
ছবি : বাসস