দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে আজ বুধবার থেকে মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী ভোটগ্রহণের আগে, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরে শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখতে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেবে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আইএসপিআর জানায়, সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাহিনীগুলো এলাকাভিত্তিক মোতায়েন সম্পন্ন করছে। সেনাবাহিনী ৬২টি জেলায় নিয়োজিত হয়েছে। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫টি উপজেলায় বিজিবি এককভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় সেনাবাহিনী বিজিবির সঙ্গে এবং উপকূলীয় চারটি উপজেলায় কোস্ট গার্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
উপকূলীয় দুটি জেলাসহ (ভোলা ও বরগুনা) মোট ১৯টি উপজেলায় নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারযোগে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার সহায়তা দেবে।এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে নির্বাচনী সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বিমানবাহিনীর প্রয়োজনীয়সংখ্যক হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যৌথ সমন্বয় সেল স্থাপন করা হয়েছে, যা ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সশস্ত্র বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলেও জানায় আইএসপিআর।
এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা-মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ও পার্বত্য এবং দুর্গম এলাকার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৬-১৭ জন পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তবে রিটার্নিং অফিসার চাইলে সংখ্যা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন। এবার পাঁচ লাখ ১৬ হাজার আনসার সদস্য, এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ পুলিশ ও র্যাব সদস্য, দুই হাজার ৩৫০ কোস্ট গার্ড সদস্য এবং ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি সদস্য থাকবেন।
এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় দেশীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার দরকার নেই। মিডিয়া আপনাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে আপনি বলবেন, এটা রিটার্নিং অফিসারকে আমি রিপোর্ট দিয়েছি। এ নিয়ে রিটার্নিং অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার বা যিনি অথরাইজড, তিনি কথা বলবেন। কোনো স্টেটমেন্ট আপনি মিডিয়ায় দেবেন না।’
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মোস্তাফিজুর রহমান এসব কথা বলেন। বিদেশি মিডিয়ার সঙ্গে প্রো-অ্যাক্টিভলি কথা বলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রচুর পর্যবেক্ষক আসছে, বিদেশি সাংবাদিক আসছেন। প্রত্যেককে ইসি থেকে আইডি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের যখন দেখবেন, ওয়েলকাম করবেন। মনে রাখবেন, তাঁরা আমাদের দেশের মেহমান।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আগামী রবিবার ভোটের দিনও গণপরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা চলাচল করবে। তবে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও স্টিমার চলাচল বন্ধ থাকবে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।