Online Desk:বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের যোগ দেওয়া শাহজাহান ওমরের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, ঝালকাঠিতে মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর সন্ত্রাসী দল ছেড়ে এখন নৌকায় উঠেছে। অর্থাৎ ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে।আজ শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পুনরায় দেশের উন্নয়ন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান। সেজন্য সকলকে অনুরোধ করেন ৭ জানুয়ারি সকাল-সকাল কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে।
বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সন্ত্রাসী দলের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
কারণ তারা মানুষ পোড়ায়, মানুষ হত্যা করে। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে আর তাদের রাজনীতি মানুষ পোড়ানোতে। আমি বিএনপি-জামায়াতকে ধিক্কার জানাই।
বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তারা অকাতরে নির্যাতন-অত্যাচার করেছে।
তাদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে এ অঞ্চলের ২৫ হাজার মানুষ কোটালীপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। তারা মানুষের হাত-পা কেটে ফেলতো, চোখ উপড়ে ফেলতো। মেয়েদের উপর পাশবিক নির্যাতন চলাতো। তখন কেউ ঘরে থাকতে পারতো না।
এর আগে শুক্রবারের জনসভায় শাহজাহান ওমর বলেন, আওয়ামী লীগে সর্বকনিষ্ঠ হলেও জয় বাংলার চেতনার পুরনো লোক আমি।
আমাকে আপনারা সাদরে গ্রহণ করুন।
শাজাহান ওমর বলেন, নৌকা উন্নয়নের প্রতীক, নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক, নৌকা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক। তাই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে। ৭ জানুয়ারি নৌকায় ভোট দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যকে প্রতিহত করতে হবে।বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সভাপতিত্ত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাপা সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, আওয়ামী লীগে সদ্য যোগদান করা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর (বীর উত্তম), অভিনেত্রী তারিন জাহান ও অভিনেতা মীর সাব্বির প্রমুখ।
জনসভার সমন্বয়ক ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে সড়কপথে বরিশালে পৌঁছেছেন। শুক্রবার বেলা একটার দিকে প্রধানমন্ত্রী বরিশালে পৌঁছে সার্কিট হাউসে অবস্থান নেন। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম শেষে দুপুর তিনটায় ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সভামঞ্চে আসেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আসতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। নানা রঙের শাড়ি, রঙিন ক্যাপ-পোশাক পরে মাঠে আসেন দলীয় সমর্থকরা। সঙ্গে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থক জড়ো হন। দুপুর ১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সমাবেশ।
জনসমাবেশ উপলক্ষে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে শেখ হাসিনার নির্বাচনী সমাবেশস্থলে নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। আশপাশের এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সমাবেশে প্রায় ১০ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে বলে দাবি বরিশাল জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগের। নির্বাচনী এ জনসভায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সংসদীয় সব কটি আসনের দলীয় প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যোগ দেন।