বাংলাদেশের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় জোর দিয়েছে ভারত। অন্যদিকে বাংলাদেশ তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানিবণ্টন এবং ভিসা সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
আজ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ভারতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পররাষ্ট্রসচিবদের নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ে আলোচনার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। বৈঠকে ভারত ভার্চুয়াল জি২০ শীর্ষ সম্মেলন ও ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রশংসা করেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত ও নিরাপত্তা, শিল্প, বাণিজ্য, যোগাযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতার সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছে। উপ-আঞ্চলিক, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে উভয় পক্ষ মতবিনিময় করেছে।
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশ ও ভারত বৃহত্তর সমৃদ্ধির জন্য সহযোগিতা আরো গভীর করার ওপর জোর দিয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ভারতের জি২০ সভাপতিত্বে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে’ যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিবরা বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং ২০২৩ সালে এ সম্পর্কের অগ্রগতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রসচিবরা বলেন- এ ধরনের সহযোগিতা শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাস্তবধর্মী ফলাফলের নিদর্শন।
বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিবরা উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, আঞ্চলিক সংযোগ, আঞ্চলিক বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোগ, নিরাপত্তা ও পানিসংক্রান্ত সমস্যা, কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক বিষয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে জোর দেন। তারা এলডিসি উত্তরণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও আলোচনা করেন।
উভয় পক্ষই শান্তিপূর্ণ সীমান্ত এবং দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন দ্রুত তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীগুলোর পানিবণ্টন চুক্তি, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিযোগ্য পণ্য বাণিজ্যের বাধা দূর করা এবং দুই দেশের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে অনুরোধ জানান। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তিনি ভারতের সহযোগিতা চান।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা বাংলাদেশকে বিশ্বস্ত প্রতিবেশী হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদারে ভারতের নেতাদের অঙ্গীকারের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। তিনি এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দেন।