আসমানি ধর্মগুলোর মধ্যে ইহুদি ধর্ম সবচেয়ে পুরনো। সাধারণত ইহুদি বলতে আল্লাহর নবী মুসা (আ.)-এর অনুসারীদের বোঝানো হয়। বনি ইসরাইল নামে পরিচিত এই সম্প্রদায় সে সময় আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হলেও পরবর্তী সময়ে নিজেদের ধর্মগ্রন্থের বিকৃতি করে। পবিত্র কোরআনে ইহুদি জাতি প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা এসেছে।
বনি ইসরাইলের পরিচয় : মহান আল্লাহ পৃথিবীতে জিন ও মানুষের হিদায়াতের জন্য অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ইবরাহিম (আ.)-কে ইরাকের বাবেল শহরে পাঠিয়েছেন। তিনি তাঁর স্ত্রী সারাহকে নিয়ে ফিলিস্তিনের আল-খলিল নগরীতে চলে যান।
২. মুমিনদের প্রতি সব সময় বিদ্বেষী : বনি ইসরাইল মুমিনদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। পবিত্র কোরআনে মহানবী (সা.)-কে এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘আপনি মানুষের মধ্যে ইহুদি ও মুশরিকদের সবচেয়ে বেশি শত্রুভাবাপন্ন পাবেন, এবং যারা বলে, আমরা খ্রিস্টান, আপনি তাদের মুমিনদের নিকটতর বন্ধুত্বে দেখবেন…।
৪. বিশ্বাসঘাতকতা : সব সময় বিশ্বাস ভঙ্গ করা বনি ইসরাইলের একটি মন্দ স্বভাব। তাই তাদের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যখনই অঙ্গীকার করেছে, তখনই তা ভঙ্গ করেছে, বরং তাদের অধিকাংশই অবিশ্বাসী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১০০)
৫. পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা : বনি ইসরাইল সুযোগ পেলেই বিশৃঙ্খলা বা সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যতবার যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে মহান আল্লাহ ততবার তা নিভিয়েছেন, তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করে বেড়ায়, আল্লাহ বিশৃঙ্খল ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬৪)
৬. দীর্ঘায়ু লাভের আকাঙ্ক্ষা : ইহুদিদের মধ্যে বেঁচে থাকার বাসনা প্রবল। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি জীবনের প্রতি তাদেরকে সব মানুষের মধ্যে, এমনকি মুশরিকদের চেয়েও বেশি লোভী পাবেন, তাদের সবাই আকাঙ্ক্ষা করে যদি তাদের হাজার বছর আয়ু দেওয়া হতো, কিন্তু দীর্ঘায়ু তাদের শাস্তি থেকে দূরে রাখতে পারবে না, তারা যা করে আল্লাহ তার দ্রষ্টা।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৯৬)
৭. আল্লাহকে দোষারোপ : পৃথিবীতে একমাত্র বনি ইসরাইল আল্লাহকে নানাভাবে গালমন্দ করেছে। কখনো তারা আল্লাহকে দরিদ্র বলে আখ্যায়িত করেছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলে নিশ্চয়ই আল্লাহ অভাবগ্রস্ত এবং আমরা অভাবমুক্ত, তাদের কথা ও অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করার বিষয়টি আমি লিখে রাখছি, আমি বলব, জ্বলন্ত আজাব ভোগ কোরো। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮১)
৮. নিজেদের আল্লাহর সন্তান দাবি : ইহুদিরা নিজেদের আল্লাহর সন্তান বলে দাবি করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তাঁর প্রিয়জন, আপনি বলুন, তাহলে তিনি তোমাদের অপরাধের কারণে কেন শাস্তি দেবেন, বরং তোমরা মানুষ…।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১৮)
৯. মানুষকে তাচ্ছিল্য করা : ইহুদিরা নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে এবং অন্যদের নিচু মনে করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কিতাবধারীদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে, যার কাছে বিপুল সম্পদ আমানত রাখলেও ফেরত দেবে, আবার এমন লোকও আছে, যার কাছে এক দিনার রাখলেও তার পেছনে লেগে না থাকলে সে তা ফেরত দেবে না; এর কারণ তারা বলে, নিরক্ষরদের ওপর আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং তারা জেনেশুনে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৭৫)
১০. আল্লাহর অভিশাপ : বনি ইসরাইলের অপকর্মের কারণে মহান আল্লাহ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন এবং তাদের চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিত করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ও মানুষের প্রতিশ্রুতি ছাড়া তারা যেখানেই ছিল লাঞ্ছিত হয়েছে, তাদের ওপর আল্লাহ ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং তারা অভাবগ্রস্ত হয়েছে, কারণ তারা আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করত এবং অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করত, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং সীমালঙ্ঘন করত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১২)
১১. বারবার শাস্তি : বনি ইসরাইলের লোকেরা যুগে যুগে আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে। তারা জালিম শাসকের নিয়ন্ত্রণে থেকে লাঞ্ছনাকর জীবন যাপন করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করুন ওই সময়ে কথা, যখন আপনার রব ঘোষণা করেন যে তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ওপর এমন লোক পাঠাবেন, যারা তাদের কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে, আপনার রব শাস্তি দিতে তৎপর এবং তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৬৭)
১২. নবীদের হত্যা : বনি ইসরাইল অসংখ্য নবী-রাসুলকে হত্যা করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করে এবং যারা ওই সব মানুষকে হত্যা করে, যারা ন্যায়বিচারের নির্দেশ দেয়, আপনি তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দিন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২১)