ডাক বিভাগকে ডিজিটাল করে সেবাগ্রহীতা বাড়াতে গত ১৫ বছরে সাতটি প্রকল্প নেওয়া হয়। শিগগির নতুন আরো একটি প্রকল্প নেওয়া হবে। এর পরও ডাক বিভাগের সেবাগ্রহীতা দিন দিন কমছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের কাজ শেষ।
দুটি প্রকল্প চলমান। নির্বাচনের আগে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ডাক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডাক বিভাগের কার্যপ্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়করণ, গ্রামীণ মানুষের জন্য পোস্ট ই- সেন্টার নির্মাণ, তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর গ্রামীণ ডাকঘর নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ, ডাক অধিদপ্তরের সদর দপ্তর নির্মাণ প্রকল্প ও ডাক পরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প পাঁচটি ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের অধীন জরাজীর্ণ ডাকঘরগুলোর নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ এবং ডাক অধিদপ্তরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ সংশোধনী প্রকল্পের কাজ চলছে ২০১৭ সাল থেকে।
২০২৩ সালের জুনে প্রকল্প দুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো পুরো কার্যক্রম শেষ হয়নি। এর মধ্যে ডাক সেবার সক্ষমতা বাড়াতে আরো একটি নতুন প্রকল্প আসছে নির্বাচনের আগে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে একটি জরিপ করা হয়েছে।
এর প্রতিবেদন চলতি মাসে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। অথচ পোস্টাল ক্যাশকার্ড লেনদেনের অনলাইন সেবা কয়েক মাস ধরে বন্ধ আছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ ৯ অক্টোবর সারা দেশে বিশ্ব ডাক দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘টুগেদার ফর ট্রাস্ট কোলাবরেটিং ফর এ সেফ অ্যান্ড কানেক্টেড ফিউচার’।
কমানো হয়েছে চার ধরনের সেবার ফি
ডাক সেবার বিদ্যমান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে গত বছরের এপ্রিলে চার ধরনের সেবার ফি কমিয়েছে ডাক বিভাগ।
এর মধ্যে শূন্য থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি চিঠির ফি আগে ছিল ১০ টাকা। গত বছরের এপ্রিলে দুই টাকা ফি কমিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে আট টাকা। জিইপির ২০ গ্রাম পর্যন্ত ফি ছিল ২০ টাকা, ৫০ গ্রাম পর্যন্ত ২৫ টাকা, ১০০ গ্রাম পর্যন্ত ৩০ টাকা। এখন ১০০ গ্রাম পর্যন্ত জিইপির ফি ১০ টাকা। ১০ কেজি পার্সেলের বর্তমান ফি ১০৮ টাকা, আগে ছিল ১৫০ টাকা। মানি অর্ডারের জন্য আগে প্রথম ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমিশন ছিল পাঁচ টাকা। পরবর্তী প্রতি ১০০ টাকা বা তার অংশবিশেষের জন্য কমিশন ছিল দুই টাকা। এখন পরবর্তী প্রতি ১০০ টাকায় কমিশন নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ পয়সা। তার পরও গত বছরের তুলনায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কমেছে। এতে দুই বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে দ্বিগুণ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সেবাগ্রহীতা বাড়ানোর জন্য ডাক বিভাগের আরো সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য কিছু বিল্ডিং বানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য প্রচার নয়, ডাক সেবা ও জনবলকে ডিজিটাল করা। ডাক সেবা ডিজিটাল করতে শিগগির একটি প্রকল্প নেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি সক্ষমতা বাড়াতে পারি, তাহলে সেবাগ্রহীতা তো কমবে না বরং লাভজনক হবে।’
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তরুণ কান্তি সিকদার বলেন, ‘বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকার জন্য ফি অনেক কমানো হয়েছে। এখন সেবা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ডাক সেবা বাড়াতে ভবন নির্মাণ, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, যাতে সেবাগ্রহীতাদের আরো ভালোভাবে সেবা দেওয়া যায়।’
কমছে সেবাগ্রহীতা
রাজধানীতে ১১টি সাব পোস্ট অফিস রয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর সাব পোস্ট অফিসে গতকাল রবিবার পার্সেল হয়েছে মাত্র ছয়টি, জিইপি করা হয়েছে ৭০টি, চিঠি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৩১৫টি। এ ছাড়া রেজিস্ট্রি চিঠি গ্রহণ করেছে দুই হাজার ২০০টি। জিইপি গ্রহণ করেছে ২৫০টি। মোহাম্মদপুর সাব পোস্ট অফিসের এলাকা হলো ধানমণ্ডি, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, কল্যাণপুর, গাবতলী, আগারগাঁও সংসদ ভবন ও গণভবন এলাকা। এসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ বসবাস করে। অথচ গতকাল চিঠি এসেছে মাত্র দুই হাজার ৪৫০টি।
মোহাম্মদপুর সাব পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার নুরুল আমিন বলেন, ২০০৫ সালের আগে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি চিঠি আসত। এখন প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।
আয় কমেছে দ্বিগুণ
দুই বছরের ব্যবধানে ডাক বিভাগের রাজস্ব আয় কমেছে দ্বিগুণ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আটটি খাতে আয় ছিল চার কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসব খাতে আয় হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে ডাক বিভাগের ব্যয় হয়েছে আট কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আয় কমে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। আগে যেসব খাতে বেশি আয় হতো, সেগুলো ডিজিটাল হয়ে গেছে। ফলে ডাক বিভাগের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেছে। এখন কাগজের চিঠিপত্র নেই, মানি অর্ডার নেই। এগুলো ডাক বিভাগের আয়ের মূল উৎস ছিল। এ ছাড়া পার্সেল বহনে প্রচুর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেছে।