আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজি (রহ.) বলেন, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি পর্দার অন্তরালে তার একান্ত জীবন সংশোধন করে নেয় এবং তা পাপমুক্ত করে, আল্লাহ তার বাহ্যিক জীবন দাগমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বিনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে তার জীবন নির্বাহে আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি তার ও আল্লাহর মধ্যকার সম্পর্ক সুন্দর রাখে, আল্লাহ মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সুন্দর করে দেন।
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) আল্লাহর জন্য ভগ্ন ও বিনীত হৃদয় বিষয়ে আলোচনা করছিলেন।
তিনি বলেন, ভগ্ন হৃদয়, বিনয়, বিনম্রতা, আনুগত্য ও আল্লাহমুখী হওয়া আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। আল্লাহ ভগ্ন হৃদয়ের অধিকারীদের নিকটবর্তী এবং তাঁর সাহায্য ও অনুগ্রহ এমন ব্যক্তিদের জন্য ত্বরান্বিত হয়। আল্লাহর জন্য বিনয়ী ও বিরহী হৃদয় ব্যক্তিকে আল্লাহমুখী করে এবং তাঁর ভালোবাসার পথে পরিচালিত করে। ফলে তার জন্য এমন সব দরজা খুলে যায়, যা অন্য কোনোভাবে খোলে না।
যদিও সব ইবাদত ও আনুগত্য বান্দার জন্য আল্লাহর ভালোবাসার দ্বার উন্মুক্ত করে। তবে আল্লাহর জন্য বিনয় ও বিনম্রতা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক সুদৃঢ় করে। আল্লাহর সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পর্কের কারণে বান্দার ভেতর থেকে দুর্বলতা, অক্ষমতা, ত্রুটি ও অপূর্ণতাগুলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এভাবে আল্লাহপ্রেমী ব্যক্তি একসময় আল্লাহ ও মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে যায় এবং আল্লাহ তাকে প্রতি কদমে সাহায্য করেন।
(মাদারিজুস সালিকিন)ইমাম আওজায়ি (রহ.) বলেন, একদল মানুষ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে বের হলো এবং তাদের ভেতর বেলাল বিন সাআদ (রহ.) নামের একজন পুণ্যবান মানুষ ছিলেন। তিনি বললেন, হে লোকেরা! তোমরা কি তোমাদের পাপ-পঙ্কিলতার কথা স্বীকার করছ? সবাই বলল, আমরা স্বীকার করছি। তখন তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে দোয়া করলেন : হে আল্লাহ আপনি বলেছেন, ‘যারা সৎকর্মপরায়ণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো কারণ নেই। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৯১)
আমরা সবাই ভুল স্বীকার করছি।
আমাদের ক্ষমা করে দিন। আপনি বৃষ্টি দান করুন। আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি দান করলেন এবং সমবেত লোকেরা বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরল। (হুলয়াতুল আউলিয়া)
বকর ইবনে আবদুল্লাহ মুজনি (রহ.) বলেন, হে মানুষ! কে তোমাদের মতো সৌভাগ্যবান! তোমরা চাইলেই অনুমতি ছাড়া তোমাদের মনিবের দরবারে প্রবেশ করতে পারো এবং কোনো মাধ্যম ছাড়াই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারো। লোকেরা বলল, সেটা কিভাবে? তিনি বললেন, যখন তোমরা যথাযথভাবে অজু করে মেহরাবে (জায়নামাজে) প্রবেশ করো, তখন তোমরা অনুমতি ছাড়া আল্লাহর দরবারে প্রবেশ করো এবং কোনো মাধ্যম ছাড়া কথা বলো। (ইহয়াউ উলুমিদ্দিন)
আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, দুনিয়া হলো জীবননাশী বিষের মতো। প্রবৃত্তি হলো তার প্রতারক ষড়যন্ত্রকারী। বহু বিষয়ে এখন খুব মিষ্টি মনে হয়, যার তিক্ততা ভবিষ্যতে অসহনীয় হয়ে উঠবে। হে মানুষ! তুমি দুর্বল হৃদয় ও চিন্তাশক্তির অধিকারী। ফলে তুমি ঐশী নির্দেশনা ছাড়া সুপথ খুঁজে পাবে না। সুতরাং তোমার দৃষ্টি যেন হারামে আবদ্ধ না হয়, তোমার জিহ্বা যেন পাপে তৃপ্ত না হয় এবং তোমার শরীর যেন জাহান্নামের জ্বালানিতে পরিণত না হয়। (আত-তাবসিরাহ)