লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা দুই মামলায় বিএনপির ৯ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়া শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও সাহাবুদ্দিন সাবু বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।কারাগারে পাঠানো নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ বিএনপি-যুবদল ও ছাত্রদলের ৯ জন নেতা-কর্মী।
গত রোববার দুপুর ১২ টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দা আমেনা ফারহিন এই আদেশ দেন।
এর আগে দুই মামলায় আদালতে জামিনের আবেদন করেন বিএনপির ওই ৯ নেতা-কর্মীরা। পরে আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া একই সময় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়া ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক পৌর মেয়র সাহাবুদ্দিন সাবু অসুস্থ থাকায় আদালতে উপস্থিত হতে না পারায় সময় চেয়ে আবেদন করেন। এ সময় আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করে এ্যানীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পুলিশের দায়ের করা এই দুই মামলায় আসামিরা হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। পরে নিম্ন আদালতে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন আসামিরা। আদালত আসামিদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
আদালতের ঘোষণা পাওয়ার পরপরই নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন, বিএনপি নেতা মাইন উদ্দিন চৌধুরী রিয়াজ ও যুবদল নেতা আবদুল হালিম হুমায়ুন ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বাবরসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
আসামিদের আইনজীবি ও জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি আহাম্মদ ফৌরদোস মানিক অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন। আজ আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নাকচ করেছেন। আসামিরা ন্যায় বিচার পাননি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি জসিম উদ্দিন বলেন, পুলিশের দায়ের করা বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইন, সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশকে মারধর করার দুই মামলায় আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মামলার অন্য তিন আসামি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবুল খায়ের ভূইয়া ও সাহাবুদ্দিন সাবু আদালত উপস্থিত না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৮ জুলাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টার দিকে জেলা বিএনপির উদ্যোগে শহরের গোডাউন রোডের বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসভবনের সামনে থেকে পদযাত্রা বের করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পদযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপর্ণূ সড়ক প্রদক্ষিন শেষে ঝুমুর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। মিছিলটি রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়।
এতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতিসহ অন্তত ৫০ নেত-কর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত হন দুই শতাধিক নেতা-কর্মী। ওই সময় অতিরিক্ত পুলিষ সুপার মো. সহেল রানা ও সদর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিনসহ ৫০ পুলিশ সদস্যও আহত হন। এতে দুইটি মোটরসাইকেল, দুইটি প্রাইভেট হাসপাতালসহ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। সড়কে আগুন জালিয়ে বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া পদযাত্রা চলাকালীন সামাদ এলাকায় কৃষকদল কর্মী সজিব হোসেনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ঘটনার পর দিন সদর থানায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে দুইটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে একটি বিষ্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশকে আহত করার ঘটনায় অপর মামলাটি দায়ের হয়েছে। এই দুই মামলায় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এই মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া সজিব হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে পৃথক মামলা দায়ের করে। অপরদিকে কমলনগর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজুর লক্ষ্মীপুরের বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।