আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশ্বের সামনে মানবাধিকার নিয়ে অঙ্গীকারের পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ‘ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর)’-এর আওতায় বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হবে আগামী নভেম্বরে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার বাংলাদেশের ইউপিআর পর্যালোচনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় ধরনের আগ্রহ থাকবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ নিজেই ইউপিআর কাঠামোকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে।
২০২২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশ সফরকালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গুমের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানান। সরকার আগামী সেপ্টেম্বরেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২০১৮ সালের মে মাসে ইউপিআরের আওতায় তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছিল। সেখানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২৫১টি সুপারিশ করেছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৭৮টি সুপারিশ গ্রহণ করেছে। বাকি ৭৩টি গ্রহণ করেনি। বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সম্পর্কিত সুপারিশগুলোর বিষয়ে সরকারের আপত্তি ছিল। গুমের অভিযোগের বিষয়ে সরকার বরাবরই বলে আসছে, ‘গুম’ বলে কোনো শব্দ বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে নেই। অন্যদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে সরকার বরাবরই বলে আসছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে যেকোনো মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত হয়।
২০০৯ সাল থেকে তিন দফায় বাংলাদেশের ইউপিআর শুনানিতে মৃত্যুদণ্ডব্যবস্থা বিলোপ, সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়ার সুপারিশ ছিল। বাংলাদেশ সেগুলো গ্রহণ না করে কারণ ব্যাখ্যা করেছে। এবারও এ বিষয়গুলো আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
বিশেষভাবে উঠতে পারে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশেই রোহিঙ্গাদের জীবিকা, শিক্ষা ও চলাফেরার সুযোগসহ বিভিন্ন অধিকার দেওয়ার পক্ষে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। আসন্ন ইউপিআর অধিবেশনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যালোচনার সময় মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ বিষয়টি তুলে ধরতে পারে বলে জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিবেদনে বিগত বছরগুলোতে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সরকারের অর্জন, উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাগুলো তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া বাস্তবতার নিরিখে এসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশ তার সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা দেবে।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ইউপিআর পর্যালোচনায় অংশ নেয়। ওই বছর প্রথম ও ২০১৩ সালে দ্বিতীয় পর্যালোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০১৮ সালে তৃতীয় পর্যালোচনায় নেতৃত্ব দেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। এবারও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। তা ছাড়া নির্বাচনের প্রাক্কালে মানবাধিকার পর্যালোচনাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেও দেখা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের ইউপিআর পর্যালোচনায় জনগণের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশার বিষয়টি আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে তার নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরবে।