আরো উন্মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক গড়তে আমাদের যে লক্ষ্য তার অর্জন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এক অপরিহার্য অংশীদার’—যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডারসেক্রেটারি আজরা জেয়াকে উদ্ধৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এই বার্তা দিয়েছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। একই সঙ্গে তারা বলেছে, ‘আমাদের অংশীদারির ভিত্তি অভিন্ন গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।’
আজরা জেয়ার চার দিনের বাংলাদেশ সফর শেষ হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার টুইটারে ওই সংক্ষিপ্ত বার্তার পাশাপাশি সফরের সারমর্ম প্রকাশ করেছে। এর শিরোনাম—‘যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারির প্রতি অব্যাহত সমর্থন জানাতে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
নৈশভোজের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে ডোনাল্ড লুর সফরের মতো এবারের সফরের আগেও একটি উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল যে তাঁরা এসে বুঝি নতুন কিছু করবেন; আমাদের চাপে ফেলবেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যাঁরা এসেছেন তাঁরা বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। মানবাধিকার শুধু নির্বাচনকালীন সময় বা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার নয়; মানুষের পানির অধিকার, নারীদের ক্ষমতায়ন—অনেক কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত।
আর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, কিছু বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। সে কারণে দেশটি বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব কমেছে।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বার্তা : সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ হওয়ার ওপর জোর দিয়েছে। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডারসেক্রেটারির বক্তব্যে ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের’ কথা দুইবার এসেছে। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের সবার মঙ্গল ও ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য নির্বাচন ও শাসন ব্যবস্থায় জনগণের বড় পরিসরে অংশগ্রহণের কথা বলেছেন।
সংলাপের পক্ষে, কিন্তু উদ্যোগ নেবে না : যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডারসেক্রেটারি আজরা জেয়া বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের পক্ষে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে সরাসরি এ ধরনের উদ্যোগ নেবে না তাও বলেছেন। এর আগেও ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও এমন বক্তব্য দিয়েছেন।
ইন্দো-প্যাসিফিকে সহযোগিতায় জোর : কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের যে লক্ষ্য ঠিক করেছে তাতে বাংলাদেশ জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে বলে ওয়াশিংটন মনে করে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এটি একটি বড় অগ্রগতি। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাংলাদেশের সম্পর্ককে দেখেছে। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অনেকাংশে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে আরো সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাংলাদেশের গুরুত্ব ইন্দো-প্যাসিফিকের দৃষ্টিতেও বেড়েছে।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরো কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি সম্পর্ক আরো নিবিড় ও অংশীদারি জোরদারের আগ্রহের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবাধ ও মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উত্থানকে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখে। চীনকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।
তত্ত্বাবধায়ক দাবি, নির্বাচন বর্জন প্রশ্নেও নিরপেক্ষ অবস্থান : মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারির সঙ্গে আলোচনার পর সরকারের মন্ত্রীরা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নীতিগত কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনোভাবেই তোলেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডারসেক্রেটারি ঢাকা সফরে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের দাবি ও নির্বাচন বর্জনের হুমকি প্রসঙ্গে বলেছেন, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতার বার্তা : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডারক্রেটারির রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং নতুন করে আর্থিক সহযোগিতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ সংকট মোকাবেলা ওয়াশিংটনের সম্পৃক্ত থাকার বার্তা মিলেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক।
শ্রমিক নেতা শহিদুল হত্যার বিচার : যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল শ্রমিক নেতা শহিদুল হত্যার বিষয়টি তুলে ধরার পর বাংলাদেশ এ প্রসঙ্গে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কজন সন্দেহভাজন আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন এবং ওই হত্যাকাণ্ডের পর তাঁকে বিরোধী একটি রাজনৈতিক দল তাদের কর্মী বানানোর চেষ্টা করেছিল সে তথ্য নিয়ে কথা হয়েছে।