রাশিয়ার হামলার মোকাবেলা করতে ইউক্রেনকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব ও অন্য সহযোগীরা। তবে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়তে ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করতে চাইছে না অনেক দেশ। সেই ‘লাল রেখা’ অবশ্য ক্রমেই সরে চলেছে। ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যাটেল ট্যাংকের পর এবার উন্নত এফ-১৬ বোমারু যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়ার প্রশ্নে দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলছেন অনেক পশ্চিমা দেশের নেতা।
সরাসরি এমন বিমান সরবরাহের প্রতিশ্রুতি না দিলেও এমন বিমান চালাতে ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষণের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।
তবে রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বের এমন সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্টোনভ বলেন, ইউক্রেনকে এফ-১৬ বোমারু যুদ্ধবিমান সরবরাহ করলে এই সংকটে ন্যাটো জড়িয়ে পড়ছে কি না—সেই প্রশ্ন উঠে আসবে। কারণ ইউক্রেনে এফ-১৬ চালানোর কোনো অবকাঠামো নেই।
তা ছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পাইলট ও রক্ষাণাবেক্ষণের কর্মীরও অভাব রয়েছে।
আন্টোনভ প্রশ্ন তোলেন, “বিদেশি ‘স্বেচ্ছাসেবীদের’ নিয়ন্ত্রণে ন্যাটোর বিমান ঘাঁটি থেকে মার্কিন যুদ্ধবিমান ওড়ানো শুরু করলে কী হবে?” সোমবার ভোরে রুশ দূতাবাসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে রাষ্ট্রদূতের এই মন্তব্য প্রকাশিত হয়।
ব্রিটেনসহ ইউরোপের কিছু দেশের পর শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এফ-১৬ বোমারু যুদ্ধবিমান চালাতে ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বাইডেনকে আশ্বাস দিয়েছেন, এমন বিমান হাতে পেলে তার দেশ রাশিয়ার ভূখণ্ডের ওপর হামলা চালাবে না।
ওয়াশিংটনে রুশ রাষ্ট্রদূত আন্টোনভ অবশ্য বলেছেন, ২০১৪ সালে অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ইউক্রেনের যে কোনো হামলাকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তার মতে, এমন ঘটনা ঘটলে রাশিয়ার জবাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে। উল্লেখ্য, এর আগে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্ডার গ্রুশকোও মারাত্মক ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন।
আপাতত ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক ও পর্তুগাল ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে এক কোয়ালিশন গঠন করেছে। মার্কিন প্রশাসন সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিতে সম্মত হয়েছে।
তবে সবার আগে ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তারপর বিমান সরবরাহের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ কোন কোন দেশ কোন সময়ে কত সংখ্যক বিমান হস্তান্তর করবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্তের আভাস নেই। ইউক্রেন অবশ্য প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্তেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
পাইলট প্রশিক্ষণের পর ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেই বিমান হস্তান্তর ও মোতায়েন করতে অনেক সময় লাগবে বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তবে এমন সম্ভাবনা এখন থেকেই রাশিয়ার নেতাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই।