২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনকে সকাল থেকে বিকাল অবধি ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক’ বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও মন্তব্য করলেও সন্ধ্যায় ফলাফল গণনা শুরু হওয়ার পর থেকে সুর পাল্টে ক্রমাগত মিথ্যাচার চালিয়ে যায় বিএনপি। যা আজও চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
তিনি নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তৎকালীন সময়ে প্রকাশিত বিএনপি ও ঐক্যজোট নেতাকর্মীদের নির্বাচনকালীন বিভিন্ন বক্তব্যের ভিডিও একত্রিত করে শেয়ার করে জানান, সন্ধ্যায় মির্জা ফখরুল-কামাল হোসেনদের ভোল পাল্টে যায় এবং তারা তাঁদের নিজেদের ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করে বক্তব্য দিতে থাকেন।
গতকাল শুক্রবার (১৯ মে) রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেইজে সম্প্রচার করা প্রায় ৩৫ মিনিটের এক লাইভে এই মন্তব্য করেন তিনি
সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদের ভেরিফায়েড পেইজে প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচন চলাকালে দুপুরে ডা. কামাল হোসেন এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে বলে বক্তব্য দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি নিয়েও নির্বাচন চলাকালে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বিএনপির বিভিন্ন সারির নেতাকর্মীরা। কিন্তু সন্ধ্যায় ভোটের ফলাফল গণনা শুরু হলে তারা নিজেদের অবস্থান পাল্টে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
তৎকালীন বিএনপি-ঐক্যজোটের প্রধান ডা. কামাল হোসেন ভোট দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি ভোট দিতে উৎসাহিত হয়েছি শীতের সকালে এত লোককে ভোট দিতে দেখে
যেখানে ভোট দিয়েছি সেখানে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। তবে নির্বাচনের ফলাফল দেখার পর সিদ্ধান্ত নেব যে নির্বাচনের ফল মেনে নেব কি না।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ডা. কামাল হোসেনের বক্তব্য অনুসরণ করে নির্বাচনের ফলাফলে ব্যাপক ভরাডুবি দেখে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি ও তাদের ঐক্যজোট। কিন্তু তখন থেকে এখন পর্যন্ত তাদের এই ভোট বর্জনের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ প্রদান করতে ব্যর্থ হয় দলটি
‘রাতের ভোট’-এর কথা বারবার বিভিন্ন আলোচনায় ও টক শোতে বললেও এর সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত ও তাদের ঐক্যজোট।
প্রকাশিত এই ভিডিওতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য প্রদান করে জানানো হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জামায়াতে ইসলামী একটি কেন্দ্র দখলের জন্য গুলি করে, যেখানে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করা হয় নোয়াখালীতেও। বিএনপির নেতারা এই হামলা চালান বলে গণমাধ্যম প্রতিবেদনে উঠে আসে। এই নোয়াখালী-২ আসনে এক আনসার সদস্য নিহত হন
একইভাবে কুষ্টিয়ার দৌলতদিয়ায় নিহত হন এক আনসার সদস্য। সেখানেও কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে জামায়াত-বিএনপি সমর্থকরা।
সর্বোপরি ভিডিওতে ২০০১ সালের ভোটে এক কোটি ২১ লাখ ভুয়া ভোটার সংশ্লিষ্ট করার বিষয়ে এবং ভোট কারচুপির বিষয়েও তথ্য তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের কেন্দ্র থেকে কোনো সমর্থন না পাওয়ার অভিযোগও মিলেছে একাধিক গণমাধ্যমে। ভিডিওর শেষ অংশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে খালেদা জিয়ার বক্তব্যটিও তুলে আনা হয়। যেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই।
সজীব ওয়াজেদ তার ভেরিফায়েড পেইজে লেখেন, নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত দল বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এমনকি আওয়ামী লীগ-বিরোধী সংবাদমাধ্যমেও ‘রাতের ভোট’তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। এখন পর্যন্ত তাদের দাবির পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণও তারা হাজির করতে পারেননি। বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচনটিকে সুষ্ঠু বলে রায় দিয়েছিলেন। বিএনপির ভরাডুবির কারণ বিএনপি নিজেই।