বিসমিল্লাহ কী এবং এটা কেন পড়তে হয় তা সবাই জানে। তবে খুব কমসংখ্যক মানুষই বিসমিল্লাহর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ভেবে দেখে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার আগে রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবিগণ, বুজুর্গানে দ্বিন ও উলামায়ে কেরাম বিসমিল্লাহ পাঠ করেন। পুরো পৃথিবীতে এই অভিন্ন চিত্র দেখা যাবে। খাবার গ্রহণ থেকে শুরু করে যেকোনো ছোট বা বড় কাজ মুসলিমরা বিসমিল্লাহর মাধ্যমে শুরু করে।
আল্লাহর নামে কাজ শুরু হবে সেটা ভালো কথা; কিন্তু আল্লাহর তো আরো বহু নাম আছে। যেমনটি কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর আছে সুন্দর সুন্দর নাম। যেমন তিনি পরাক্রমশালী, তিনি কঠোর, তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি পূর্ণতার অধিকারী, তিনি সৌন্দর্যের অধিকারী ইত্যাদি। এমন আরো বহু নাম আছে; কিন্তু শেখানো হয়েছে, যখন কোনো কাজ শুরু করা হবে তখন ‘আল্লাহ’ নামেই তা শুরু করা হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরো দুটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য : ক. রহমান (পরম দয়ালু), খ. রহিম (পরম দয়াময়) যুক্ত করা হয়েছে।
মূলত আল্লাহ, রহমান ও রহিম নামে শুরু করার মাধ্যমে মুমিনের জীবনে অভিমুখ নির্ধারিত হয়। মুমিন সর্বদা সব কাজে আল্লাহমুখী থাকবে এবং সে আল্লাহর অনুগ্রহের অনুরাগী হবে। সে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতে তার মুক্তি নেই। পরম করুণাময় আল্লাহ নিজ দয়ায় আমাদের খাওয়াচ্ছেন, প্রতিপালন করছেন, আমাদের সর্বপ্রকার বিপদাপদ থেকে রক্ষা করছেন। পরকালেও তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়।
হাদিসে এসেছে, আল্লাহর যেসব গুণ যতটুকু বান্দার পক্ষে ধারণ করা সম্ভব তা নিজের ভেতর ধারণ কোরো। কোরআনে আল্লাহর সে গুণাবলির উল্লেখ বেশি এসেছে, যেগুলো বান্দার পক্ষে (তার সাধ্যানুযায়ী) ধারণ করা সম্ভব। ঠিক এ কারণেই সুরা ফাতিহার শুরুতে আল্লাহ, রহমান ও রহিম শব্দত্রয় নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা জানি, যে জিনিস মানুষ বেশি শোনে ও বেশি পাঠ করে, তা মানুষের ভেতর বেশি প্রভাব সৃষ্টি করে। আল্লাহর নাম ও তাঁর গুণাবলি বারবার পাঠ করলে মানুষের মনে তার ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং তাঁর বিশ্বাস জীবনের গতিপথ পাল্টে দেবে।
আজানের কথাই ধরা যাক, আজান কে না শোনে? কিন্তু আজানের শব্দ ও মর্ম নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করে কয়জন? কোনো জিনিস বারবার শুনলে তার অর্থ বোঝা ও মর্ম উপলব্ধি করা সহজ হয়ে যায়। সব সময় শুনলে ও চর্চা করলে তা মানুষের জীবনে ছায়ার মতো হয়ে যায়, তাকে অনেক কিছু থেকে রক্ষা করে। আজানে ব্যবহৃত শব্দ ও বাক্যে যেভাবে আল্লাহর বড়ত্ব, মাহাত্ম্য ও একত্ববাদের ঘোষণা করা হয়, তা একজন মুমিনের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনার জন্য যথেষ্ট। একইভাবে ‘আল-হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’-এর অর্থ খেয়াল করে দেখুন। মহান আল্লাহ জগৎলোর প্রতিপালক। তিনি একটি জগতের, একটি রাষ্ট্রের, একটি সমাজ, একটি গোষ্ঠী, একটি শ্রেণির প্রতিপালক নন, তিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। আমাদের পৃথিবী, নক্ষত্ররাজি, আকাশমণ্ডলীসহ যত জগৎ আছে সব জগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহ। সবাই আল্লাহর ছায়ার নিচে প্রতিপালিত।
আল্লাহ সব কিছুর প্রতিপালক। তিনি সব কিছুর প্রতি দয়াশীল এই বাক্যগুলো মানবজাতিকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইসলাম মানুষকে দয়ালু হতে অনুপ্রাণিত করেছে। ইসলামের দাবি, তুমি দয়া কোরো, পরস্পরকে দেখে খুশি হও, অন্যকে নিজের ভাই মনে কোরো, তার প্রয়োজন পূরণ কোরো, তার কষ্ট দূর কোরো, মানুষের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হওয়াকে নিজের দায়িত্ব মনে কোরো। এর মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর গুণাবলি নিজের ভেতর ধারণ করার চেষ্টা করবে। এটাই মুমিনের জীবনে বিসমিল্লাহ পাঠের বহুমুখী তাৎপর্য।
আল্লাহ সবাইকে ইসলামের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য উপলব্ধি করার তাওফিক দিন। আমিন
তামিরে হায়াত থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর