প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ফাঁকা জায়গাগুলোর প্রতি ইঞ্চি ফসলি উঠানে রূপ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এবার সেখানে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি প্রায় ১০০ মণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে। গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর চাষের অর্ধেক জমি থেকে ৪৬ মণ পেঁয়াজ তোলা হয়। গণভবনের একটি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবেলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজে গণভবন আঙিনার পতিত প্রতি ইঞ্চি জমি উৎপাদনের আওতায় এনেছেন।
গণভবন সূত্রে জানা যায়, গতকাল গণভবনে মোট চাষ করা পেঁয়াজের প্রায় অর্ধেক জমির ফসল তোলা হয়। এতে ৪৬ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যায়। বাকি জমিতে আরো ৫০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দেশি পেঁয়াজের বর্তমান বাজারদর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এতে গণভবনে ফলন পাওয়া ৪৬ মণ পেঁয়াজের দাম আসে আনুমানিক ৬৫ হাজার থেকে ৭৩ হাজার টাকা। পাঁচজনের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে মাসে পাঁচ কেজি পেঁয়াজের প্রয়োজন হলে গণভবনে উৎপাদিত প্রায় ১০০ মণ পেঁয়াজে সাত-আট শ পরিবারের এক মাসের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ হবে।
গণভবনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবেলায় দেশের জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার আহ্বান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি প্রধানমন্ত্রী, তিনি নিজেও তাঁর এই সরকারি বাসভবনে অব্যবহৃত প্রতি ইঞ্চি জমিকে কাজে লাগিয়েছেন। গ্রামের গৃহস্থ বাড়ির মতো পুরো গণভবনকে প্রায় একটি খামার বাড়িতে পরিণত করে সৃষ্টি করেছেন বিরল উদাহরণ।
টানা ১৪ বছর গণভবনের বাসিন্দা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময়ে তিনি গণভবনের বিশাল আঙিনায় হাঁস-মুরগি, কবুতর, গরু পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ধান, শাক-সবজি, ফুল-ফল, মধু ও মাছ চাষ করছেন। তিল-সরিষার পাশাপাশি পেঁয়াজও চাষ করেছেন তিনি।
একাধিক সূত্র জানায়, গণভবন আঙিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঁশফুল, পোলাও চাল, লাল চালসহ বিভিন্ন জাতের ধান, ফুলকপি, পাতাকপি, লালশাক, পালংশাক, ধনেপাতা, গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় বতুয়াশাক, ব্রকোলি, টমেটো, লাউ, শিমসহ প্রায় সব ধরনের শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করছেন। তিল, সরিষা, সরিষা ক্ষেতে মৌচাক পালনের মাধ্যমে মধু আহরণ, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা; আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, বরই, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ফল, গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলেরও চাষ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবসর পেলেই এসব তদারকি করেন। এসব ফসল ফলাতে ব্যবহার করা হয় গণভবনে গরুর খামারের গোবর থেকে উৎপাদিত জৈব সার।
গণভবনের আঙিনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরু, দেশি হাঁস-মুরগি, তিতির, চীনা হাঁস, রাজহাঁস ও কবুতরের খামার করেছেন। তিনি গণভবনের পুকুরে চাষ করছেন রুই-কাতল, তেলাপিয়া, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এমনকি গণভবন পুকুরে মুক্তার চাষও করছেন শেখ হাসিনা। অবসর সময়ে গণভবনের লেকে মাছও ধরেন তিনি।
গণভবনের একটি সূত্র জানায়, উৎপাদিত এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য সামান্য রেখে গণভবন কর্মচারী এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞায় টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি সব অনুষ্ঠানে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে, সে বিষয়ে বারবার তাগিদ দিয়েছেন।