সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার শাচনা-জামালগঞ্জ নদীপথে বালু, চুনাপাথর ও কয়লাবাহী নৌকা থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে একটি প্রভাবশালী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। এতে প্রতিনিয়তই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বিআইডব্লিউটিএর প্রকৃত ইজারাদার কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীকভাবে হচ্ছেন বদনামী।
আর এসব চাঁদাবাজদের এহেন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নৌ পরিবহনের মাঝি ও শ্রমিকেরা। প্রতিদিন নৌ পরিবহনের মাঝিদের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজ চক্রটি, প্রকৃত ইজারাদার ব্যাবসায়ীকভাবে হচ্ছে প্রচুর পরিমানে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ।
গত ৩১/০১/২০২৩ তারিখ রোজ মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলা নদীপথে শাচনা এবং ভিমখালী ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদী পথে চলাচলকারী মালবাহী চলতি নৌকা থেকে দিনে-দুপুরে ছোট নৌকা করে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করছে প্রভাবশালী চক্রটি।
চাঁদা দিতে রাজি না হলে নৌকায় থাকা শ্রমিকদের লাঞ্ছিত এবং মারধর করে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা, এমন অভিযোগ নৌ পরিবহন শ্রমিকদের এবং একই অভিযোগ বিআইডব্লিউটি এর প্রকৃত ইজারাদারগণের। আর এসব উপরি চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজির ফলে ব্যবসা পরিচালনায় ক্ষতিগ্রস্থসহ নিরাপদভাবে পণ্য পরিবহনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এবং প্রকৃত বিআইডব্লিউটিএর ইজারাদার হচ্ছে বিড়ম্বনার শিকার।
প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন নৌ-পরিবহন শ্রমিকের, তারা জানান, বিআইডব্লিউটিএ এর নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হারে ইজারাদারের নিযুক্ত কর্মীরা টোল আদায় করেন । আমরা নৌ-শ্রমিক এব মালিকরাও তাদের আচরণে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। এটা উনাদের ব্যবসায়ীক সততা। কিন্তু অতিদুঃখের বিষয় বিআইডব্লিউটিএর এরিয়া পার হবার পর আবার একপক্ষ নৌকায় উঠে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে পূনরায় চাঁদা দাবী করে, নৌশ্রমিকদের কাছে। চাঁদা না দিলে, নেমে আসে শারিরীক নির্যাতন। নৌযান মাঝিদের হয়রানি ও চাঁদাবাজী বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এইরুটে চলাচলকারী নৌ পরিবহন মাঝি ও শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীগণ। বিআইডব্লিউটিএর প্রকৃত ইজারাদার ও এদের এহেন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ। এ বিষয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
শাচনা-জামালগঞ্জ নদীপথে বিআইডব্লিউটিএর ইজারাদার শাহ রুবেল আহমেদ জানান, আমরা বিআইডব্লিউটিএর নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি নির্ধারিত হারে ০.২৫ (পঁচিশ) পয়সা ফুট করে প্রতিটি নৌকা থেকে টোল আদায় করা হয় এবং নৌ শ্রমিকদের কাছে টোল আদায়ের রিসিট দেওয়া হয় । আমরা সার্বিকভাবে নৌ পরিবহন-শ্রমিক, মাঝি এবং ব্যবসায়ীদের কে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। কিন্তুু ইদানিং আমাদের বিআইডব্লিউটিএর ইজারদারের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি প্রভাবশালী মহল বেপরোয়া ভাবে চাঁদা আদায় করছে, না দিলে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করছে নৌ-শ্রমিকদের এবং ব্যবসায়ীদের কে।
শাচনা-জামালগঞ্জ নদীপথে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি বন্ধ করার লক্ষ্যে এবং চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনতে এ বিষয়ে আমি বাদী হয়ে গত ২৯/০১/২০২৩ তারিখে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর মকবুল আফেন্দি সহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেছি। জামালগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর বালু পাথর সমিতি বলে কোন সমিতি নাই, যা আছে এটি একটি পুরাতন সমিতি, এই সমিতির কোন দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। সমিতির নাম দিয়ে আমার দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখিত মকবুল গংরা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন সময় অভিযোগে উল্লেখিত আসামীগণ আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদেরকে সরাসরি এবং মোবাইল ফোনেও হুমকি দিচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত মকবুল আফেন্দির কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি মহল ঈর্ষান্নিত হয়ে, আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছরাচ্ছে। আমি নদীতে কোন ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না। বর্তমান বিআইডব্লিউটিএর ইজারাদারদের কোন বৈধ কাগজ পত্র নেই। উনারা অবৈধভাবে প্রতি নৌক থেকে ০.৭০ পয়সা থেকে ০.৮০ পয়সা করে টোল আদায় করছে। আমাদের দূর্লভপুর বালু পাথর ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
দূর্লভপুর বালু পাথর সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবী হোসেন জানান, আমরা ব্যবসায়ীগণ অবৈধ বিআইডব্লিউটিএর ইজারাদার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। আমার উপর আনিত চাদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা।
অভিযোগের বিষয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব’র সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, শাচনা-জামালগঞ্জ নদীপথে বিআইডব্লিউটিএর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে বালু পাথর সমিতি এবং ইজারাদার কর্তৃপক্ষ উভয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। সঠিক ইজারা প্রদান করা হয়েছে কি না এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর বরাবর চিঠি দিয়েছি। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে চিঠির উত্তর পাওয়ার পর এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এছাড়াও জামালগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন কে নদীপথে টহল জোড়দার করতে নির্দেশ দিয়েছি। অবৈধভাবে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।