সীমান্তের শূন্যরেখার ওপারে রোহিঙ্গা শিবিরে গত বৃহস্পতিবার থেকে লড়াই হচ্ছে মূলত রোহিঙ্গাদের দুটি গোষ্ঠী ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ ও ‘রোহিঙ্গা স্যালভেশন অর্গানাইজেশনের’ (আরএসও) মধ্যে। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের সামনে এমনটিই জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলারেরও (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা) বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের জন্য এর অর্ধেক অর্থ দিতেই হিমশিম খাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিক, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কেউ কেউ হয়তো জানেন, গত বৃহস্পতিবার যে ঘটনা ঘটেছে (সীমান্তে) তা নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে। কয়েক বছর ধরে আমরা যা জানতাম, পরিস্থিতি আর তেমন নেই। আমরা জানতাম, আরসা রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে (প্রভাব বিস্তার করছে)।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যা ঘটছে তা হলো আরসা ও রোহিঙ্গা স্যালভেশন অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে লড়াই। সীমান্তে শূন্যরেখায় ছোট্ট খালের ওপারে মিয়ানমারের অংশে যে শিবির ছিল, তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। সেটি এখন আর আরসার নয়, আরএসওর নিয়ন্ত্রণে। এটি একটি বড় ঘটনা।’
উল্লেখ্য, আরসা ও আরএসও—দুটিকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অনেকে। মিয়ানমার বাহিনী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন হামলার জন্য আরসাকে দায়ী করেছে। আরসা সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে জোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্লেষণে বলা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী গতকালের অনুষ্ঠানে কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের বলেন, ‘আরেকটি বিষয় আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করছে রোহিঙ্গাদের পেছনে। ২০২১ সালে ১.২ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। বাংলাদেশ যত খরচ করছে তার ৫০ শতাংশেরও জোগান দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিমশিম খাচ্ছে।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তিন হাজার ডলারেরও কম মাথাপিছু আয়ের একটি দেশ বছরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করছে নিজের পকেট থেকে। তারা আরো একটু বেশি সহায়তা করবে—এমনটিই আমরা আশা করি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে জেআরপির আওতায় যে অর্থ পাওয়া গেছে, তা খুব আশাব্যঞ্জক নয়। শিগগিরই বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একসঙ্গে বসে ২০২৩ সালের জেআরপি তুলে ধরবে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, টেকসই সমাধানের জন্য সরকার দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেন, এই সংকটের উৎস মিয়ানমার। সমাধানও মিয়ানমারে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারবিষয়ক একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, এর পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়াকে তিনি দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যেকোনো ধরনের আলোচনার জন্য আমরা আমাদের দরজা খোলা রেখেছি। আমাদের টেকসই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাঁচিয়ে রেখেছে।’
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন