মালয়েশিয়ার কেলাং সমুদ্রবন্দরে খালি কনটেইনার থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোরের নাম ফাহিম। সে অস্পষ্ট বাংলায় কথা বলছে। তার জাতীয়তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মালয়েশিয়ার পুলিশ, গণমাধ্যম ও শিপিং লাইন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এখন তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইন্টিগ্রা জাহাজটি রওনা হয়। ১৬ জানুয়ারি জাহাজটি মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। এক পর্যায়ে ওই কিশোরের চিৎকার শুনে জাহাজের ক্যাপ্টেন পুলিশকে খবর দেন। ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ এসে জাহাজটি জেটিতে ভিড়িয়ে খালি কনটেইনার খুলে তাকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি জানান, ওই কিশোর কনটেইনারে একাই ছিল। তাকে উদ্ধারের পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে দেশে পাঠানো হবে।
মালয়েশিয়ার দ্য স্টার পত্রিকা গতকাল এক প্রতিবেদনে লিখেছে, মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরের ৬ নম্বর জেটিতে জাহাজটি ভেড়ানোর পর ছেলেটিকে উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, খেলা শেষে একটি কনটেইনার ডিপোতে থাকা খালি কনটেইনারে উঠে পড়ে এবং এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই অবস্থায় কনটেইনারে সে কেলাং বন্দরে পৌঁছে।
সাউথ কেলাং পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার চা হু ফং দ্য স্টারকে বলেন, ছেলেটি সম্ভবত বন্ধুদের সঙ্গে খেলা শেষে খালি কনটেইনারে ঘুমিয়ে পড়ে। এখন সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরে কনটেইনার থেকে বাংলাদেশি কিশোরের উদ্ধার হওয়ার দুটি ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ায় মালয় ভাষার স্থানীয় গণমাধ্যম ওহ বুলান গতকাল এই ভিডিও চিত্র প্রকাশ করে। উদ্ধার হওয়ার পর ওই কিশোরকে স্বাভাবিকভাবে কনটেইনার থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তার গায়ে গরম জামা ও থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ছিল।
এই ঘটনার প্রকাশিত ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, স্থানীয় পুলিশ ও বন্দরকর্মীদের উপস্থিতিতে ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারটি খোলা হয়। খোলার পরই কনটেইনার থেকে ওই কিশোরকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। ভিডিওতে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার নাম ফাহিম বলে জানায় সে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেছেন, ডিপো বা চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর কোনো এক জায়গায় নিরাপত্তা ঘাটতি বা দুর্বলতা আছে বলেই বারবার একই ঘটনা ঘটছে। এবার ছেলেটি জীবিত থাকায় তার কাছ থেকে সঠিক বয়ান জেনে দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া এখন সবচেয়ে সহজ। কিভাবে সে এত কঠিন ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিল, সেটি বাংলাদেশে এনে কিংবা দূতাবাসের মাধ্যমে জেনে ঘাটতি উত্তরণ সম্ভব। এসব ঘটনায় বিশ্ব শিপিং বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি যাতে আর ক্ষুণ্ন না হয়, সে জন্য দ্রুত স্থায়ী সমাধান দরকার।
এর আগে গত অক্টোবরে খালি কনটেইনারে করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালয়েশিয়ার পেনাং বন্দরে পালিয়ে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। পরে কনটেইনার খুলে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই কনটেইনারের মালিক সিনোকর আর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বেসরকারি বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে খালি কনটেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবেশ করেছিল।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন