এ বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় শ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনাররা বলে আসছিলেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ইভিএম প্রকল্প পাস না হলে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করা সম্ভব হবে না। ইসির বর্তমানে যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে ৭০ থেকে ৮০টির মতো আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এখনো ইভিএম প্রকল্প পাস হয়নি। কবে হবে, আদৌ হবে কি না সে বিষয়ে ইসি অন্ধকারে থাকলেও আশা ছাড়েনি। এ অবস্থায় আগামী রবিবার ইসি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন পায়নি। প্রকল্প প্রস্তাবটি কী অবস্থায় আছে তা এখনো পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানায়নি। কমিশন সভায় এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সভায় প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনা হবে। নির্বাচন অধিশাখার কর্মকর্তা এবং কারিগরি কর্মকর্তাদেরও বক্তব্য শুনতে হবে। তারপর বলা যাবে, কত দিনের মধ্যে কতটা পেলে কত আসনে ইভিএমে ভোট করতে পারব।’
নির্বাচন কমিশন আশা করেছিল, গত মঙ্গলবার ইভিএম কেনার নতুন প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠবে কিন্তু তা ওঠেনি। এ বিষয়ে ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘ইভিএম প্রকল্পটি আজকের একনেক সভার কার্যতালিকায় ছিল না। প্রধানমন্ত্রী এটা নিয়ে জানতেও চাননি। আমরাও নিজে থেকে কিছু বলিনি। তবে যেকোনো প্রকল্প কমিশনে এলে সেটা নিয়ম মেনে প্রকল্প মূল্যায়ন সভা (পিইসি) করে তারপর তা একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়।’
গত ৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, আগামী বছরের (চলতি বছর) জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ইভিএম প্রকল্প পাস না হলে জাতীয় নির্বাচনে দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট সম্ভব নয়। বিদেশ থেকে ইভিএম যন্ত্রপাতি আনতে নানা প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে অর্ডার দিতে হবে। তা না হলে আর সম্ভব হয়ে উঠবে না।
গত ১ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএম প্রকল্পের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ১৫ জানুয়ারির পর হলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে ইভিএমে ভোট নেওয়া খুবই কঠিন হবে। তবে ইভিএমে না হলে ব্যালটেও ভোট করার জন্য প্রস্তুত ইসি।’
ওই দিন আনিছুর রহমান আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন ইভিএম প্রকল্পে এক হাজার ৩০০ জনবল চেয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ১৩ জন দেওয়ার বিষয়ে মত দেওয়া হয়েছে। এটি পুনর্বিবেচনা করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। মাত্র ১৩ জন লোকবল দিয়ে ইভিএমে ভোট পরিচালনা সম্ভব নয়। ইভিএম প্রকল্পের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
গত ৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৫ জানুয়ারির মধ্যে ইভিএমের নতুন প্রকল্প পাস না হলে আমাদের ব্যালটেই যেতে হবে। ইভিএম প্রকল্প খুব একটা এগোচ্ছে বলে মনে হয় না। আমরা বলেছিলাম, প্রকল্প পাস ও অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করব। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পাস না হলে আমাদের কাছে বর্তমানে যা আছে তা দিয়েই ভোট করব। এ ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী শুধু ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে।’
গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর তাঁদের ওই প্রত্যাশিত সময়সীমা সম্পর্কে বলেন, ‘১৫ তারিখ বলা মানেই তো ১৫ তারিখ নয়। দু-এক দিন এদিক-সেদিকও হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন যদি চলতি মাসে প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যবস্থা করে, তখন আমাদের চাহিদা কতটা পূরণ হলো তা দেখে চূড়ান্ত কিছু বলতে পারব।’
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে নতুন করে ইভিএম কিনতে ইসি পরিকল্পনা কমিশনে ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয়। এতে দুই লাখ ইভিএম কিনতে ছয় হাজার ৬৬০ কোটি ২৯ লাখ টাকা চায় ইসি। চলতি অর্থবছরেই চাওয়া হয় তিন হাজার ৬৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই হাজার ৯৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানায়। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন