অনলাইন ডেস্ক:
আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা এত সোজা নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে সজাগ থাকতে হবে, তারা আবার ভোগান্তিতে পড়বে নাকি উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে গিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বিএনপি বিজয়ের মাসে বিজয় উৎসব না করে যেদিন থেকে পাকিস্তানি বাহিনী দেশে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে, সেদিন ঘোষণা দেয় সরকার উৎখাত করবে। এতই সোজা? আওয়ামী লীগ পারে। আইয়ুব খানকে উৎখাত করেছি, ইয়াহিয়া খানকে যুদ্ধে পরাজিত করে উৎখাত করেছি, জিয়া যেখানেই গেছে আন্দোলন তার বিরুদ্ধে হয়েছে, এরশাদকে উৎখাত করেছি, খালেদা জিয়া ১৫ই ফেব্রুয়ারির ভোট চুরির পর তাকে উৎখাত করা হয়েছে; আবার ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিল, সেটাও বাতিল হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগ পারে। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা এত সোজা নয়। ’
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয় আমরা এনেছি, এই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত করেই চলতে হবে। আবার যেন ওই খুনি, যুদ্ধাপরাধী, যাদের আমরা বিচার করেছি, তারা ক্ষমতায় এসে এই দেশকে ধ্বংস করতে না পারে। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে ও লক্ষ রাখতে হবে। ’
ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুৎ-গ্যাস দেওয়া সম্ভব নয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সে জন্য দামও বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্য ও গ্যাসের মূল্য বেড়ে গেছে। বিশ্বে দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে?’ তিনি বলেন, ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুৎ-গ্যাস দেওয়া আর সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে খরচ হয়, তা সবাইকে দিতে হবে। গ্যাস উৎপাদনে যে টাকা খরচ এবং পরিবহন খরচ, তা সবাইকে দিতে হবে।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত দিন আমাদের অর্থ ছিল, আমরা ভর্তুকি দিয়েছি। কিন্তু করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অবরোধের ফলে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিয়েছে তাতে আমরাও আক্রান্ত। সুতরাং এত দিন বিদ্যুৎ এবং গ্যাসে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, সেই ভর্তুকির টাকা এখন আপনাদের দিতে হবে। ’
বামপন্থীরা মনে হয় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে
বিএনপি, জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চের যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে এবং তাদের সঙ্গে আরো কিছু পার্টি দাঁড়াল। আরেকটি জিনিস খুব অবাক লাগে। কোথায় বামপন্থী, আর কোথায় ডানপন্থী। যারা বামপন্থী তারা মনে হয় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে আমাদের বাম, অতি বাম, স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম—সব যেন এক হয়ে এক প্ল্যাটফরমে। ওই যে বলেছিল না, কী বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস। ’
বামপন্থীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোথায় তাদের আদর্শ? কোথায় তাদের নীতি? আর কোথায় কী? আর কী কারণে—যারা হত্যাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারিতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যায় যার বিচার হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দেশের টাকা পাচারকারী, সব ধরনের অপকর্ম, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা, ব্যাংকে রেখে সেই টাকার মুনাফা খাওয়া, সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের নেতৃত্বে আমাদের বড় বড় তাত্ত্বিক, বড় বড় কথা বলে। তারা এক হয়ে যায় কিভাবে, সেটাই আমার প্রশ্ন। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছিল। সেই দলে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে? এদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সমর্থন করে কিভাবে? এটা ভাবলে আমার অবাক লাগে। এরা তো ইতিহাস জানে। ’
২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে চক্রান্ত করতে পারবে, ষড়যন্ত্র করতে পারবে; যেমন ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি, তার ভোগান্তি এ দেশের মানুষের হয়েছে। তাই মানুষকেও সজাগ থাকতে হবে। আবার তারা ভোগান্তিতে পড়বে, নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনে এগিয়ে গিয়ে গড়ে তুলবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে সরকার জনগণের সেবক। সরকার ইচ্ছা করলেই মানুষের উন্নতি করতে পারে—সেটা আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে। ক্ষমতায় আসাটা খুব সহজ ছিল না। এত সহজে আসতে দেয়নি। জনগণ আমাদের সমর্থন করে। ভোট আমাদের আছে। কিন্তু নির্বাচনে বারবার কারচুপি করে হোক, ষড়যন্ত্র করে হোক, চক্রান্ত করে হোক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের শক্তি বড় শক্তি। আর বিশ্বাস। মানুষের শক্তি নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসেছে। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় বসে নিজে খাচ্ছে না। দেশের মানুষকে খাবার দিচ্ছে। রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সংবিধানে বর্ণিত মানুষের প্রতিটি মৌলিক চাহিদা আমরা পূরণ করে যাচ্ছি। ’
আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। আলোচনায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন