কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
তামাক নয়, বর্তমানে গমও ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের কৃষকেরা। কয়েক বছর আগে এ অঞ্চলের যেসব জমিতে তামাক চাষ হতো, সেখানে এখন লাভজনক ফসল হিসেবে গম ও ভুট্টার চাষ হচ্ছে। মিলছে কাঙ্ক্ষিত ফলনও। এতে গমও ভুট্টা চাষের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্য ফিরেছে এ উপজেলার শত শত কৃষকের।
মাজদিয়ার, তেলিগাংদিয়া,ঝাউদিয়া,সংশ্লিষ্ টরা জানান, উপজেলার তারাগুনিয়া, আমদহ, কামালপুর, সোনাইকুন্ডি,রিফায়েতপুর, চিলমারি এসব অঞ্চল এবার গম ও ভুট্টার ব্যাপক আবাদ হবে আশা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
যদিও বিভিন্ন কোম্পানির প্রলোভনে এখনো উপজেলায় কয়েকটি অঞ্চলে তামাক চাষের প্রভাব কিছুটা রয়ে গেছে। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিশেষ পরামর্শে ও লাভজনক হওয়ায় তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা বা অন্য ফসল চাষ বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান অনেকে।
দৌলতপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলায় ৯ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে গম ও ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। যার মধ্যে ৪ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা ও ৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন ধরা হয়েছে । বর্তমান বাজারের এসব ভুট্টা প্রতি মণ ১৪০০-১৫০০ ও গম ১৬০০ – ১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকদের লাভ হচ্ছে উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গম ৫৩৫০ ভূট্টা ৪৫২৫, আলু ১০৬৪ শীত সবজি ২০৯০, পেঁয়াজ ২৭৪২,সরিষা ১৯৭৭ মসূর ৩৯৩২ সহ উপজেলার মোট ২৯৭০৫ হেক্টর জমিতে এবার শীত কালীন ফসলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
দৌলতপুরের একসময়ের তামাকচাষী মিলন রহমান জানান, তামাক চাষ ছেড়ে তিনি বর্তমানে ভুট্টা ছাড়াও সরিষা, গম ও বোরো ধান চাষ করছেন। বিশেষ করে ভুট্টা চাষে তিনি তামাকের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করছেন। শুধু মিলন রহমানই নন, এ অঞ্চলে তার মতো শত শত তামাকচাষী এখন, গম, ভুট্টা সরিষা, মশুরি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তুলনামূলকভাবে কম পরিশ্রমে তামাকের থেকে বেশি লাভই তাদের এ আগ্রহের মূল কারণ।
মিলন রহমান বলেন, তামাকের তুলনায় ভুট্টায় খরচ কম, লাভও বেশি। তাছাড়া তামাক চাষ ক্ষতিকর হওয়ার ভুট্টা চাষই শ্রেয়। দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন এ উপজেলায় একসময় ব্যাপক তামাক চাষ করা হতো। বর্তমানে তামাক চাষের চেয়ে অন্যান্য ফসলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে এবং এখান থেকেই নিরুৎসাহিত হয়ে এই সব ফসল চাষাবাদকরছে।
আমরা তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আমরা পুরোপুরি সফল, তা এখনো বলা যাবে না। কারণ এ অনেক এলাকায় আশাব্যঞ্জকভাবে গম, ভুট্টা ও অন্যান্য ফসল চাষবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেও উপজেলার একটি অংশ এখনো তামাক চাষ পুরোপুরি থামানো যায়নি। তবে আগের তুলনায় তা অনেকাংশেই কমেছে। সামনের বছরগুলোয় আশা করি তামাক চাষ আরো কমিয়ে আনা উপজেলার সম্ভব হবে।