অনলাইন ডেস্ক:
সম্প্রতি নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার রিটজ-কার্লটন হোটেলে নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এক সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে কলামিস্ট পেটুলা ডভোরাক একটি নিবন্ধ লেখেন। এতে শেখ হাসিনাকে শক্তি ও সাহসের প্রতিচ্ছবি বলে উল্লেখ করা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি সম্মানজনক স্থানে নিয়ে আসার জন্যও তাঁর প্রশংসা করা হয়।
‘দিস প্রাইম মিনিস্টার লাফড অ্যাট দ্য মিম শি ইন্সপায়ার্ড : ডিসপাইট বিয়িং এ ওম্যান’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটিতে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রশংসা করেন পেটুলা ডভোরাক।
নিবন্ধ শুরু হয় এভাবে—‘ছয় বছরের শিশু জয়াকে উঁচু করে ধরে আছেন বাবা আব্দুল্লাহ নিয়ামি। রিটজ-কার্লটনের বলরুমে অনেক মানুষের ভিড়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে এসেছে সে। ’ জয়ার বাবা আব্দুল্লাহ নিয়ামি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম সে প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখুক। ’ পেটুলা লেখেন, জয়া এমন দৃশ্য দেখতে এসেছে, যা মার্কিনরা সচরাচর দেখবে না—একজন নারী সরকারপ্রধান।
নিবন্ধে বলা হয়, রাশিয়ার জনসংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষের একটি দেশকে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দেওয়া এবং ২০ বারের বেশি হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সরকারপ্রধানের দায়িত্বই নয়, নিজের দাদিসত্তার পরিচয়ও নিয়মিত দিয়ে থাকেন।
চলতি বছর ৭৬তম জন্মদিন উদযাপন করছেন তিনি। লন্ডন শহরের পাশে এক শহরে ছেলে ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করেন। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাদের জন্য রান্না করেছি। ’ এ কথা শুনে বিস্মিত হয়ে পেটুলা ডভোরাক জানতে চান, পৃথিবীতে কোনো প্রধানমন্ত্রী কিভাবে নাতি-নাতনির সঙ্গে কাটানোর মতো সময় পান? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার চিকেন বিরিয়ানি বানিয়েছি। আর ছেলের বাসায় আমার জন্য আলাদা রান্নাঘরও আছে। ’
পেটুলা ডভোরাক লিখেছেন, একটি চমৎকার সুন্দর কক্ষে ওই সাক্ষাৎকারের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে একজন অনুবাদক ও সহযোগী ছিলেন। এ ছাড়া দেয়ালে ছিল তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বড় ছবি। পরিবারের ১৭ সদস্যসহ তাঁকে হত্যা করা হয়। তবে বাবার রাজনৈতিক আদর্শকে ধারণ করে শেখ হাসিনা দুই দফায় ১৮ বছর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, ‘শরণার্থী জীবন ভালো নয়। তারা নিজের দেশে ফিরতে চায়। ’
যুক্তরাষ্ট্রেও অভিবাসীদের নিয়ে সংকট চলছে—এমন প্রসঙ্গ তুললে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার অভিবাসীদের তুলনা করা চলে না। তাদের প্রচুর জমি আছে। ফাঁকা জায়গা আছে। তাদের তো অভিবাসীদের নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আর বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশ। কিন্তু আমাদের ভূমি কম। ’ পাশ থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সহযোগী পেটুলের বোঝার জন্য স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য উইসকনসিনের সমান।
কলামিস্ট লেখেন, শেখ হাসিনা তাঁর দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে কঠোরতার জন্য পরিচিত। ২০১৫ সালে সন্ত্রাস দমনে কঠোর অবস্থানের কারণে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকেও শুভেচ্ছা পান।
একটি ‘মিম পোস্ট’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী লেখকের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলেন, ‘নারীরা পুরুষের চেয়ে ভালো। ’ এ কথা বলে শেখ হাসিনা হাসতে থাকেন। এরপর গম্ভীরভাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারী বলেই আমি দারিদ্র্য এবং শিক্ষার সংগ্রাম সম্পর্কে বেশি ধারণা রাখি। যেসব বাধা নারীরা বেশি মোকাবেলা করে এবং সেগুলো কিভাবে দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয় তা উপলব্ধি করতে পারি। ’
পেটুলা লেখেন, গত এক দশকে শেখ হাসিনা তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেশটির দারিদ্র্য কমিয়ে আনেন। শিক্ষার সুযোগ বাড়িয়েছেন এবং আবাসনব্যবস্থা বদলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘দেশে এখন কুঁড়েঘর নেই। সাধারণ ঘরও এখন ঢেউটিনের ছাদ ও ইটের দেয়ালের। আর সেগুলো দেওয়া হয়েছে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে। ’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবারও লেখকের কাছে গিয়ে স্বর নামিয়ে বলেন, ‘বিচ্ছেদ হলে ঘরটি কিন্তু নারীই পাবে, পুরুষ নয়। ’
১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া দরিদ্র দেশটি ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের অর্থনীতি হওয়ার কথাও তুলে ধরেন লেখক।
স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, আবাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতির জন্য নারীদের ওপর বিনিয়োগ করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
লেখক জানান, গত সপ্তাহে জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ভাবছিলেন তিনি এবার কিছুটা একান্ত সময় কাটাবেন। কিন্তু তাঁর অবস্থানের তথ্য ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে। সাক্ষাৎকার নিতে নিতেই হোটেলের বলরুম জনসাধারণে পূর্ণ হয়ে যায়। শেখ হাসিনাকে দেখতে আসা মালিহা জামান নামের এক নারী বলেন, ‘তাঁকে একবার দেখার জন্য এসেছি। তিনি এমন এক নারী যিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। ’ প্রধানমন্ত্রী নারীশিক্ষার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তার কল্যাণেই মাস্টার্স শেষ করে ভার্জিনিয়ায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের সুযোগ পেয়েছেন মালিহা।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন