খুলনা অফিসঃ বর্তমান সময়ে দেশের সব থেকে আলোড়ন সৃস্টি করা খুলনার মহেশ্বরপাশা খানাবাড়ী গ্রামের রহস্যজনক নিখোঁজ রহিমা বেগম(৫২)কে পুলিশ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারীর থানার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে জীবিত ও অক্ষত অবন্থায় উদ্ধার করেছে । ময়মনসিংহের ফূলপুর থানা পুলিশের উদ্ধার করা বস্তাবন্দী অর্ধগলিত লাশের আলামত দেখে নিখোঁজ রহিমা বেগমের লাশ এটা এমনটা দাবী করার মাত্র একদিন পরই তার সন্ধান মিললো। শনিবার রাত পৌনে ১১টায় রহিমা বেগমকে তার বাড়ীর সাবেক ভাড়াটিয়া সোনালী জুট মিলের সাবেক শ্রমিক আব্দুল কুদ্দুসের ফরিদপুরের বাড়ী থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় রহিমা বেগমের সাথে একটি ব্যাগের মধ্যে থেকে রহিমা বেগমের ব্যবহারের কাপুড়, ওষুধ, চিরুনী, আয়না, ফেয়ারএ্যান্ড লাভলী, কাজলসহ প্রসাধনি সামগ্রী উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ নিখোজ রহিমা বেগমকে আশ্রম দেওয়া বাড়ীর গৃহকর্তা কুদ্দুস মোল্যার স্ত্রী হীরা বেগম তার ছেলে আলামিন ও কুদ্দুসের ভাইয়ের বৌ রেহেলা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নিয়েছে। রহস্যজনক নিখোজ রহিমা বেগমকে উদ্ধারের মধ্যে দিয়ে ভিকটিমের মেয়ে আদুরী আখতারের করা অপহরণ মামলার নাটকীয় মোড় নিয়েছে। অজ্ঞাত একটি অর্ধগলিত লাশটি নিখোজ রহিমা বেগমের দাবীর মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহিমা বেগমকে জীবিত ও অক্ষত উদ্ধার এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ১০টার পর থেকে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীরা, ভিকটিমের পরিবারের করা মামলায় সন্দেহজনক ভাবে কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের স্বজনসহ উৎসুক জনতা থানার সামনে ভীড় করতে থাকে। এ সময় নিখোজ রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ হোসেন সাদীকে দেখা গেলেও গণমাধ্যমের সামনে আসা ভিকটিমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ অন্য বোনদের দেখা যায়নি।নিখোজ রহিমা বেগমকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সফল উদ্ধার অভিযান শেষে শনিবার রাত সোয়া ২টায় নিখোঁজ রহিমা বেগমকে দৌলতপুর থানায় আনা হয়। থানায় উপস্থিত বিভিন্ন মিডিয়ার কর্মীদেরকে রহিমা বেগম উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে ব্রিফ করেন কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার পরও আমরা বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্ত করতে থাকি। আমাদের কাছে গোয়েন্দা রির্পোট ছিল ভিকটিম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক কুদ্দুস মোল্যার বাড়ীতে আছেন। খবরটি আমরা নিশ্চিত হওয়ার পরে কেএমপি পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভুঞা স্যারের নির্দেশে একটি চৌকস টিম ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রাতেই রওনা দেয়। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এডিসি নর্থ মো. আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে দৌলতপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম, সাব ইন্সপেক্টর দোলা, সাব ইন্সপেক্টর মিজানসহ একটি চৌকস টিম ভিকটিমকে উদ্ধারে পাঠানো হয়। অভিযানে রওনা দেওয়ার পর পুলিশ কমিশনার স্যারসহ আমরা সর্বক্ষনিক তদারকি করতে থাকি। অভিযানিক টিম শনিবার রাত আনুমানিক পৌনে ১১টায় জানায় আমরা রহিমা বেগমকে খুজে পেয়েছি। যে বাড়ীতে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন কুদ্দুসের বাড়ীতে বসে দুই মহিলার সাথে গল্প করছিলেন। অভিযানিক টিমের অফিসারগণ যখন তাকে ঘরের মধ্যে উদ্ধার করতে যান তখন তাকে জিজ্ঞাবাদ করলে তিনি কোন কথা বলেননি। আইন শৃংখলা বাহিনীর সকল সংস্থা একযোগে কাজ করছিল। ভিকটিম ডিজিটাল সকল ডিভাইজ ব্যার্থ হয়ে যায় কারণ তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন না। তিনি বলেন যে বাড়ীতে রহিমা বেগম আশ্রয় নিয়েছে কুদ্দুস সোনালী জুট মিলে কাজ করতেন সেই সুবাদে তিনি আগে রহিমার বাড়ীতে ভাড়া ছিলাম। যে বাড়ীতে তিনি আশ্রয় নিয়ে ছিলেন সেই বাড়ীর ৩জনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে আমাদেরকে জানিয়েছেন গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকালে এই বাড়ীতে আসেন। এ সময় তার সাথে রহিমা বেগমের ব্যবহৃত কাপুড়-চোপড় ছিল। প্রথমে রহিমাকে চিনতে না পারলেও পরবির্ততে তারা চিনতে কষ্ট হয়েছে। গত কয়েক বছর আগে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ হোসেন সাদী ঐ বাড়ীতে বেড়াতে যায়। রহিমা বেগম যে বাড়ীতে আশ্রয়ে ছিল তাদের কাছ রহিমা বেগম বলেছে তিনি কখন চট্টগ্রাম কখন মোকছেদপুর ছিলেন। পুলিশক কর্মকর্তা বলেন বিষয়টি যেহেতু ভিকটিমকে নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মামলাটি যেহেতু পিবিআই তদন্ত করছে সেহেতু তদন্তকারী সংস্থা এর রহস্য উৎঘাটন করবেন বলে আশা করি।পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় রহিমা বেগম অপহরণ মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পিবিআই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভিকটিমকে আমারা বুঝে নিয়ে পরবর্তিতে এর সকল রহস্যের জট খুলে আপনাদেরকে অবহিত করবো।এদিকে মহেশ্বরপাশা খানাবাড়ী এলাকা থেকে গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় রহিমা বেগম বাড়ীর দু’তলা থেকে টিউবয়েলে পানি আনতে নিচে নেমে রহস্যজনক নিখোঁজ হয়। রাতেই নিখোঁজ রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ হোসেন সাদি দৌলতপুর থানায় একডি সাধারণ ডায়রি করে। পরে ২৮ আগস্ট নিখোঁজের ঘটনায় দৌলতপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি অপহরণ মাামলা করেন নিখোজ রহিমা বেগমের কন্যা আদুরী আক্তার । মামলায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের কথা উল্লেখ করে পার্শবর্তি ৫জনকে সন্দেহজনক ভাবে নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা দায়েরের পর র্যাব, পুলিশসহ আইন শৃংখলা বাহিনীর একাধিক টিম সন্দেহজনক ভাবে যাদের নাম এজাহারে উল্লেখ ছিল তাদেরকে ডেকে নিয়ে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরবর্তিতে ঠিকাদার হেলাল শরীফকে গত ৩০ আগস্ট, প্রতিবেশী কুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী ইঞ্জি, মো. গোলাম কিবরিয়া. ব্যবাসায় মহিউদ্দিন, ব্যাবসায়ী জুয়েল ও সরকারি চাকুরীজীবি রফিকুল ইসলাম পলাশকে পুলিশ ডেকে নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর এবং সর্বশেষ নিখোজ রহিমা বেগমের স্বামী বিল্লাল হাওলাদার ওরফে বেল্লাল ঘটককে ১২ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে রিমান্ড আবেদন করা হয়।বর্তমানে রহিমা বেগম নিখোজের ঘটনায় রহিমা বেগমের স্বামীসহ মোট ৬জন কারাগারে রয়েছে। কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে পুলিশ তেমন কোন ক্লু উৎঘাটন করতে না পারায় এবং ঘটনার রহস্য ও ভিকটিমকে উদ্ধার করতে ব্যার্থ হওয়ায় আইন শৃংখলা বাহিনী বিব্রতকর অবন্থায় পড়ে যায়। মামলাটি তদন্তের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরবর্তিতে ১৭ সেপ্টেম্বর পিবিআই মামলার নথিপত্র বুঝে নেয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ ফুলপুর থানার বাওলা গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে বস্তাবিন্দী অর্ধগলিত একটি নারীর লাশ উদ্ধার করে পরিচয় না মেলায় ১৪ সেপ্টেম্বর বেওয়ারিশ হিসাবে লাশের দাফন করা হয়। লাশের পোষাক ও আলামত দেখে ২২ সেপ্টেম্বর লাশটি নিখোজ রহিমা বেগমের বলে দাবী করেন নিখোজ রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান। তিনি ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার তার ফেসবুক পেজে ষ্ট্যাটাস দেন যাতে লেখা ছিল আমার মায়ের লাশ পেয়েছি এই মাত্র। এর কিছু সময় পরে রাত ১২ টা ৪মিনিটে আরেকটি ষ্ট্যাটাস দেয় তাতে মরিয়ম মান্নান লিখেছেন আর কারও কাছে আমি যাবনা। কাউকে আর বলবো না আমার মা কোথায়? কাউকে বলবো না আমাকে একটু সহযোগিতা করুন। কাউকে বলবো আমার মাকে একটু খুজে দিবেন ? কাউকে আর বিরক্ত করবো না। আমি আমার মা কে পেয়েগেছি। ২৩ সেপ্টেম্বর তার মায়ের লাশ সনাক্তের জন্য মরিয়ম মান্নান সহ তার ভাই বোন ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় যান। সেখানে তিনি লাশের পরনের একটি সেলোয়ারের কাপুড় দেখে লাশটি তার মায়ের বলে সনাক্ত করে। তবে পুলিশের সন্দেহ থাকায় চুড়ান্তভাবে নিশ্চিতের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বলা হলে ভিকটিমের স্বজনরা আবেদন করেন। যার শুনানীর দিন গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর রবিবার ধায্য ছিল।বহুল আলোচিত রহিমা উদ্ধারের পর থানায় ছুটে আসা মামলায় কারাগারে থাকা জুয়েল ও পলাশের পিতা শেখ আনছার উদ্দিন বলেন মামলাবাজ রহিমা বেগমগংয়ের ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক পরিকল্পিত এ মামলার বিষয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাসহ সর্বস্থরের মানুষ অবহিত ছিল। মিথ্যা সাজানো মামলায় র্যাব, পুলিশসহ একাধিক সংস্থা আমার ছেলেদেরকেসহ অন্যাদেরকে বাসার থেকে ডেকে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে কোন প্রমাণ বা ক্লু না পাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ক্ষমতা অনেক উর্ধে মন্ত্রীসহ ঢাকার প্রবাবশালী মহলকে দিয়ে পুলিশের উপর চাপ প্রয়োগ করে সন্দেহজনক ভাবে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়ে। বিনা দোষে অপরাধ না করেও আমর ছেলেরাসহ অন্যরা প্রায় ১মাস হতে চলেছে কারাগারে আছ। আমি রহিমা বেগমের মরিয়ম মান্নানসহ আত্মগোপনের পিছনের কুশিলবদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। একই সাথে অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। এলাকার ইউপি সদস্য মো. মামুন শেখ বলেন এলাকার প্রতিটি মানুষ জানত যে রহিমা বেগমের পবিারর বিশেষ উদ্দেশ্য সফল করতে এই নাটক মঞ্চস্থ করেছে। আমি সহ এ বিষয়ে যারা কথা বলতে গেছে মরিয়ম তাদেরকে তার মায়ের ঘুম মামলায় ফাসানোর হুমকি প্রদান করায় ভয়ে কেহ এগিয়ে আসেনি। তদন্তপূর্বক এই পরিবারের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেন। রহস্যজনক নিখোজ রহিমা উদ্ধারের ফলে মামলার নাটকীয় মোড় নেওয়ায় এলাকাবাসী ও স্বজনদের পুলিশ প্রশাসনের কাজে দাবী পরিকল্পিত নিখোজের ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে ষড়যন্ত্রমুলক হয়রানির পিছনের কুশিলবদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার।