কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য পুরাতন সেতুর দুপাশে সড়ক কেটে উধাও হয়েছেন ঠিকাদার। চলাচলের জন্য খালের ভেতর দিয়ে বিকল্প জরাজীর্ণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সেখানে নেই কোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা। সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডও নেই। এভাবে প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হলেও দেখা মেলেনি সেতুর নির্মাণ কাজ করা ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। চলাচলের রাস্তা কেটে ফেলাই লাখ লাখ মানুষের বুক ফাঁটা আর্তনাদ যেন থামছেনা।
জরাজীর্ণ বিকল্প সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। আহত হচ্ছেন পথচারীরা। নষ্ট হচ্ছে যানববাহন ও পরিবহনের মালামাল। সবমিলিয়ে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আহত মানুষ গুলোর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
উপজেলার পান্টি-বাঁশগ্রাম বাজার সড়কের চাঁদপুর ইউনিয়নের মহননগর পূর্বপাড়া এলাকা দুর্ভোগের এ চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পথচারীদের অভিযোগ, প্রায় ছয় মাস আগে নতুন সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে ভালো সেতুটির দুপাশের সড়ক কেটে দিয়ে পালিয়েছেন ঠিকাদার। চলাচলের জন্য খালের ভেতর দিয়ে জরাজীর্ণ বিকল্প সড়ক তৈরি করা হয়েছে। সেই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ওই সড়ক ব্যবহারকারীরা।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সরেজমিন মহননগর সেতু এলাকায় দেখা যায়, সেতুর দুপাশের পাকা সংযোগ সড়ক কাটা রয়েছে। সেখানে কোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেই। সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডও নেই। সেতুর দক্ষিণ পাশের খালের ভেতর সড়ক থেকে অনেক নিচু ও জরাজীর্ণ বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। যানববাহন থেকে যাত্রীরা নেমে হেঁটে পার হচ্ছেন। স্থানীয় ও যাত্রীরা ঠেলা দিয়ে যানবাহনগুলো মূল সড়কে তুলে দিচ্ছেন। দুর্ভোগ এড়াতে ভারী মালবাহী যানবাহনগুলো প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের চাঁদপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর এলাকার সড়ক দিয়ে চলাচল করছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পান্টি, চাঁদপুর ও বাগুলাট ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষ এ রাস্তায় চলাচল করে। পাশের ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা ও মাগুরার মানুষও কুষ্টিয়া শহরে যাওয়া আসা করে এ সড়ক দিয়ে।
উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান মিরপুর উপজেলার ঠিকাদার রিপন আলী। নির্মাণকাজের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তবে দৃশ্যমান কোনো কাজ না হওয়ায় তা বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার প্রকৌশলীকে না জানিয়ে সড়ক কেটে পালিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষক সোবহান আলী বলেন, ভালো সেতুর রাস্তা কেটে ঠিকাদার চলে গেছে। জনগণের কষ্টের শেষ নেই। হয় নতুন সেতু বানাক না হয় আমাদের রাস্তা ভালো করে দিক। সেতুটির পাশের মুদি দোকানি সজল বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিনই গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। দোকান ফেলে বারবার ছুটে যেতে হয় গাড়ি ঠেলতে। মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। এক শিশু বাচ্চা পড়ে গিয়ে বুকের হাড় ভেঙ্গে গেছে।
ইজিবাহক চালক রহমত আলী বলেন, রাস্তাটি খুব ব্যস্ত। ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চলে। খালের ভেতরের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। সেখানে যাত্রীদের নামিয়ে আবার যাত্রী দিয়েই ধাক্কা দিয়ে গাড়ি পার করতে হবে। গাড়ি উল্টে অনেক সময় মানুষ আহত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার রিপন আলীর মোবাইলে কল দেওয়া হয়। কিন্তু রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ঠিকাদার বলেন, রিপন ভাই আমার শ্রমিকদের দিয়ে সেতুর রাস্তা ভাঙার কাজ করেছিলেন। কিন্তু কবে কাজ করবেন তা জানি না। যতদূর জানি কাজের মেয়াদ নেই।
চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান তুষার বলেন, সেতুর নামে খোঁজ নেই। অথচ রাস্তা কেটে উধাও ঠিকাদার। জনগণের কষ্টের কোনো শেষ নেই। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রহিম বলেন, কাজের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কাজ বাতিলের জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার আমাদের না জানিয়ে রাতের আঁধারে সড়ক কেটে পালিয়েছেন। জনদুর্ভোগের বিষয়টি ইউএনও ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, কাটা সড়ক সংস্কার করে চলাচল স্বাভাবিক করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।