সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও গত ১০/০৯/২০২২ ইং আওয়ামীলিগের মনোনয়ন বোর্ড সভায় দলীয় সমর্থন দিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট খায়রুল কবির রুমেনকে। তিনি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার এনামুল কবির ইমন এর সহোদর বড় ভাই। ২০১৬ সালে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিষ্টার এনামুল কবির ইমনকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুটের কাছে পরাজিত হয়েছিল। গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হয়ে এবার তিনি আর দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাননি। তবে এবার প্রার্থী হয়েছেন তাহার বড় ভাই এডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের লোকজনের সাথে আলোচনায় উঠে আসে গত ইউপি নির্বাচনে সুনামগঞ্জ জেলায় নৌকার ভরাডুবির কারণ। দলীয় প্রার্থীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে নৌকা প্রতিক বরাদ্দ দেয়ারও গুঞ্জন রয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় নৌকা মার্কার জয়ের পাল্লা ছিলো শূন্য। এছাড়াও জেলার তাহিরপুর উপজেলায় একই ভাবে নৌকার প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা ছিল শূন্য। অন্যান্য উপজেলায়ও নৌকার ভরাডুবি হয়েছিল। অপরদিকে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের আরেক বর্ষীয়ান নেতা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রসাশক আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুট তাহার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে এই বারও নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। নুরুল হুদা মুকুটের রয়েছে বিরাট ভোট ব্যাংক। এই পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে যৌক্তিক কারণেই আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীর চেয়ে নুরুল হুদা মুকুটের বিজয়ের পাল্লা ভারী বলে অভিমত প্রকাশ করেন বিভিন্ন মহল । দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচন না করায় এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীর নাম শুনা যায়নি।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১ জন চেয়ারম্যান, ১২ উপজেলায় ১২টি ওয়ার্ডে ১২ জন সাধারণ সদস্য এবং মহিলাদের জন্য ১২টি ওয়ার্ডকে ৪টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে বিভক্ত করে ৪জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কথা রয়েছে। জেলার ৮৮ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বার এবং ১২ উপজেলার ১২জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ৪ পৌরসভার ৪ জন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জেলা পরিষদের নেতা মনোনিত করবেন। তবে নির্বাচনে কোন প্রার্থী তাদের ভোট দিতে পারবেন না।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে ১৭ অক্টোবর। জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ইভিএমের মাধ্যমে। অবশ্য সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এই নির্বাচন ব্যালট পেপারে মাধ্যমে গ্রহনের দাবী জানিয়ে আসছেন। ইভিএমে হলে ভোটে অংশ নেবে না বলেও ইসিকে জানিয়েছে জাপা।
২০০০ সালে তৎকালীন সরকার নতুন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করা হয়। এরপর তৎকালীন সরকারের আমলে নির্বাচনের কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এরপর প্রথমবারের মতো স্থানীয় এই সরকারে নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সে সময় ৬১টি জেলায় (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) নির্বাচন হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছিল।
স্থানীয় এই সরকারের আইনটি সংশোধনের পর ১৭ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রশাসক বসানো হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় নির্বাচিত পরিষদগুলো বিলুপ্ত করা হয়। এ অবস্থায় জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি যোগ করে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী চলতি বছরের ৬ এপ্রিল সংসদে পাস করা হয়। এরপর সংশোধনীর গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ এপ্রিল।
জেলা পরিষদ নির্বাচন আইনানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে যতগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। অর্থাৎ পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, মহিলা কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বাররা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্য নির্বাচিত করবেন। সংশোধিত আইনে জেলার প্রতিটি উপজেলাতে একজন করে সাধারণ সদস্য, ৩টি উপজেলা নিয়ে একটি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে একজন করে মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন।