অনলাইন ডেস্ক:
পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে গতকাল মঙ্গলবার এই তফসিল ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে। এ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ১২ অক্টোবর।
জেলা পরিষদ নির্বাচন ও গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। যদিও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, গাইবান্ধায় ইভিএমে ভোট হলে তারা অংশ নেবে না।
তফসিল অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপিল করা যাবে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি হবে ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থিতাপ্রত্যহারের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা।
এদিকে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর। মনোয়নপত্র বাছাই করা হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপিল করা যাবে ১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যহারের শেষ তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৩ সেপ্টেম্বর। এ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে।
৩৪ বছরের জেলা পরিষদে এবার দ্বিতীয় নির্বাচন : জেলা পরিষদ নির্বাচন এবার যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। গত জানুয়ারিতেই এই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট আইন অনুসারে, এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় হচ্ছে পরিষদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ছয় মাস। সে ক্ষেত্রে গত বছর আগস্ট থেকে চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসের মধ্যেই এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ আইন সংশোধন করে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। গত ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে জেলা পরিষদ আইনের ওই সংশোধনী বিল পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ১৩ এপ্রিল এর গেজেট হয়। এরপর গত ১৭ এপ্রিল জেলা পরিষদগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করে এসব পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম চালানোর জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয় পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের। পরে গত ২৭ এপ্রিল জেলা পরিষদে সর্বশেষ দায়িত্ব পালনকারী চেয়ারম্যানদেরই প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রশাসকরা নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত জেলা পরিষদের দায়িত্বে থাকবেন।
এরশাদ আমলে ১৯৮৮ সালে গঠিত জেলা পরিষদে সংসদ সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নতুন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। আওয়ামী লীগ নেতারাই মূলত প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান।
দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তখন ২১টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া নির্বাচনে ৬৯ জন সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য ও ১৬৬ জন সাধারণ সদস্যও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এবার সদস্যসংখ্যা কমছে : এদিকে সর্বশেষ সংশোধিত আইন অনুসারে, জেলা পরিষদগুলোর সদস্যসংখ্যা গতবারের তুলনায় এবার কমেছে। গতবার সব জেলা পরিষদেই একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যসহ মোট ২১ জন নির্বাচিত হন। সংশোধিত আইনে প্রতি উপজেলায় একজন সদস্য, চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ ও কমপক্ষে দুজন নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। এতে ছোট জেলার সদস্যসংখ্যা অনেক কমে আসবে এবং বড় কয়েকটি জেলার জেলা পরিষদে সদস্যসংখ্যা বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট আইন অনুসারে, জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা নির্বাচিত হবেন। জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটই দিতে পারবেন, প্রার্থী হতে পারবেন না। আর বাংলাদেশের ২৫ বছর বয়সী যেকোনো ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারলেও ভোট দিতে পারবেন না।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন