অনলাইন ডেস্ক:
বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক নিখিল সরকার শ্রীপান্থ ছদ্মনামে লিখতেন। তাঁর রচনাগুলোর মাঝে ঠগি উল্লেখ্য। উপমহাদেশীয় শাসনব্যবস্থায় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের ভেতর একধরনের ডাকাত শ্রেণির গড়ে ওঠা, বিস্তার, এককথায় কেস স্টাডিমূলক আখ্যান এই রচনার মূল। তৎকালীন ভারতবর্ষে এই শ্রেণির পাশবিকতা এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে লোকজন সেটাকে ভগবানের দোহাই, এমনকি পেশা হিসেবেও মেনে নিয়েছিল।
কালের ধারাবাহিকতায় সেই শ্রেণির বিলুপ্তি ঘটেছে। কিন্তু সৃষ্টির রূপান্তরের নিয়মে এখনো কিছু কিছু রক্তে সেই শ্রেণির আচরণ প্রতিবিম্বিত হতে দেখা যায়। ঠগিরা পথিকের সঙ্গে ভাব জমিয়ে, কৌশলে হত্যা করে সম্পদ ছিনিয়ে নিত। বর্বর বিষয় হলো, মৃতের সেই সমাহিত স্থলের ওপরেই খাবার, মদপানের আয়োজন করত।
ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেশীয় সীমানার বদল হয়েছে, বহু কিছু অর্জন হয়েছে। কিন্তু সেই শ্রেণির আদলে এখনো কিছু প্রাণীর আচরণে সেই আবহ রয়ে গেছে। রাজনৈতিক আশ্রয়ে এরা এখন দলীয় লেবাস লাগিয়েছে।
বাংলার মানুষ সহজিয়া সংস্কৃতির। বহমান জীবনে বহু কিছুই তারা ভুলে যায়, ভুলে গিয়ে সামনে এগোতে চায়। এ জন্যই নব্য এই ঠগিদের রুখে দিয়ে প্রবল দায়িত্ববোধের একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাঙালির সহায়। বাঙালির শান্ত সাহস হয়ে নিরবচ্ছিন্ন মননে সামষ্টিক স্বপ্নই তাঁর আরাধ্য পথ।
স্বপ্নের রং বহু বর্ণের। কিন্তু একটি স্বপ্নই যখন বহু স্বপ্নের প্রতিফলন হয়, তখন সেটা হয় প্রশান্তির ও গৌরবের। শেখ হাসিনা সমন্বিত সেই চাওয়াকে নিজের স্বপ্ন করে এগোচ্ছেন। এটা করতে পারার কারণ তাঁর সংগ্রাম ও সংযমের ইতিহাস ও ব্যাপ্তিকাল। সংগ্রাম, সংসার সামলেও বিরোধীদলীয় প্রধান থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা, পুরো যাপনটাই তাঁর সংকল্পের।
সাফল্যের সুখ পাখি হিসেবে বাংলাকে গড়ে চলেছেন তিলে তিলে। এইতো গেল কিছুদিন আগেও বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ উঁচু স্থান অর্জন করেছে। জাপানভিত্তিক ‘নিকেই কভিড-১৯ রিকভারি’ সূচকে করোনা মোকাবেলা ও সুস্থতায় এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে।
এমন আরো অসংখ্য অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বকে তাক লাগানোর সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে প্রেরণা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল অর্থাৎ একাত্তর থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। ওই সময়টায় বাঙালি ভিন্ন ভিন্ন চোখে স্বপ্ন দেখলেও পৌঁছবার সীমানা এক ছিল অর্থাৎ মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য ছিল। আজকের বাংলাদেশের অবস্থাও তেমন। প্রত্যেকে উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় এগোতে যায়। শুধু তা-ই নয়, ওই সময় এ ভূখণ্ড যেমন একক শেখ মুজিবের অঙ্গুলি হেলানে একবিন্দুতে ছিল, শেখ হাসিনার মেধা ও কর্মনিষ্ঠায় এখন তেমনি অবস্থা বিরাজ করছে।
বিস্ময়কর বিষয় হলো, তৎকালে যেমন এখানে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ষড়যন্ত্র ছিল, এখনো সেই ঢং অব্যাহত। তবে এখনকার বাজারে কৌশল বদলেছে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত অর্থনীতি ও খাদ্যের পথে হাঁটছে বিধায় এখনো লক্ষ্যবস্তু গুজব এবং অপপ্রচার করে দেশকে হেয় করা।
বাঙালির গর্বের ধন পদ্মা সেতু নিয়েও অপপ্রচার হয়েছে। সেখানে মানুষের কল্লা দেওয়া হচ্ছে এমন গুজব রটানো হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে চলা আওয়াজে এক উঠতি মডেল ন্যাকা কাঁদুনে গলায় লাইভে রটিয়েছিল ধানমণ্ডি কার্যালয়ে মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের আদলে বুঝলে, এরা আসলে বিশৃঙ্খলার সুযোগে মানুষের সেন্টিমেন্টকে অপব্যবহার করতে চায়। এখন নতুন করে যা শুরু হয়েছে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ফিতনা, ফ্যাসাদ সৃষ্টির জন্য ইন্টারনেটকেন্দ্রিক ধর্মীয় অপব্যাখ্যা প্রচার। এই বিষয়গুলোকেও নজরদারির আওতায় আনা জরুরি।
ঠগিরা মানুষ মেরেছে রুমাল, সুতা দিয়ে কৌশল করে, ভাব জমিয়ে। বিএনপি-জামায়াতও বাংলার মানুষকে হত্যা করেছে পেট্রলবোমার কৌশলে। কাজেই যারা ঠগিদের মতো মানুষ মেরে ক্ষমতা উদযাপন করতে চায়, তাদের কুকর্মগুলোকে সামনে আনতে হবে। আর হুটহাট করে যাঁরা প্রতিবিপ্লবী চেতনায় ফেটে পড়তে চান বা ভিনদেশে বৃষ্টিতে এখানে ছাতা ধরতে যান, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মনে রাখবেন। ভিনদেশি ইশারা না পাওয়ায় আপনাদের মাঝে একটা অংশ বাঙালির মুক্তিযুদ্ধেই অংশ নেননি এবং এর যে মৌন বিরোধিতাও করেছিলেন তা-ও এ প্রজন্ম জানে।
এ সব কিছু মিলিয়েই বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় জনগণের একাত্মতা ও বিশ্বাস জন্মেছে। বিস্তৃত অর্থে, সচেতন জনগণ রক্ষকের বিপরীতে একালের ঠগিদের চিনে ফেলেছে।
লেখক : প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ
haiderjitu.du@gmail.com