অনলাইন ডেস্ক:
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের ঢাকা সফরে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছিল বাংলাদেশ। সেগুলোর মধ্যে ১২টি ছিল ঋণবিষয়ক সমঝোতা। পরবর্তী বছরগুলোতে সেই সমঝোতাগুলোর অনেকগুলোই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুরবস্থাসহ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে অনেক এমওইউ করেছি।
কিন্তু টাকা তো নিইনি আমরা। ’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এই বিশ্বে বাংলাদেশ তার নিজের স্বার্থেই শ্রীলঙ্কাসহ সব দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘অন্য দেশের ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি নিশ্চিত করতে পারি, বাংলাদেশে চীনা ঋণের ফাঁদ নেই। ’
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়া চীন শুরু করেছিল। তারপর অনেক দিন ধরে আটকে আছে। এখন তো মিয়ানমারকে আরো ‘অ্যাকোমোডেটিভ’ (প্রত্যাশা পূরণের আগ্রহ) মনে হচ্ছে। তাই কিভাবে কী করা যায় সে ব্যাপারে আমরা তাদের সহযোগিতা চাইব। ’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই প্রত্যাবাসন শুরু হোক। ’
শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখনো শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকে বসেনি।
শ্রীলঙ্কার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ পরিশোধের জন্য সময় এক বছর বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় ওষুধ পাঠিয়েছে ও খাদ্যসামগ্রী পাঠাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমরা চাই সব জায়গায় শান্তি হোক। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোতে স্থিতিশীলতা আসুক। সব দেশের স্থিতিশীলতা আমরা চাই। ’
এর কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যান্য দেশের স্থিতিশীলতার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। আমেরিকান মার্কেট ভালো থাকলে, ইউরোপের মার্কেট ভালো থাকলে আমাদের গার্মেন্টস ভালো হয়। মধ্যপ্রাচ্য যদি উন্নতি করতে থাকে তাহলে আমাদের লোক নিয়োগ হয়। কিংবা মালয়েশিয়া যদি ভালো করে আমাদের লোকগুলো যেতে পারে। দুনিয়ার সব দেশে স্থিতিশীলতা থাকলে আমাদের অর্থনীতি থাকবে। কারণ আমরা একে অন্যের ওপর খুব নির্ভরশীল। সে জন্য আমরা চাই, সব জায়গায় স্থিতিশীলতা, শান্তি। ’
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনাকে ‘অলীক’ বিষয় বলে উড়িয়ে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশের হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘ঋণের ব্যাপারেই বলি, আমরা খুব হিসাব-নিকাশ করে ঋণ নিই। খুব একটা ঋণ নিই না। আমাদের খুব একটা দেনা নেই। আমাদের সর্বমোট দেনা জিডিপির ১৬ থেকে ১৭%। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা বড় ঋণ নিয়েছি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ থেকে। চীনের সঙ্গে অনেক এমওইউ করেছি। কিন্তু টাকা তো নিইনি আমরা। আর তারা কিছু কাজ করে ঠিকাদার হিসেবে। যেমন আমাদের পদ্মা সেতুতে তারা কাজ করছে। আমাদের পয়সায় আমরা সেতু নির্মাণ করছি। আমরা নিয়োগ দিয়েছি। যেহেতু তারা সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল ঠিকাদার হিসেবে। ’
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন