অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের তাৎপর্যকে স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভায় একটি প্রস্তাব উঠেছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গত মঙ্গলবার প্রতিনিধিসভায় প্রস্তাবটি এনেছেন ডেমোক্রেটিক দলীয় কংগ্রেসম্যান ব্রায়ান হিগিন্স।
প্রস্তাবটির সহপৃষ্ঠপোষক হয়েছেন রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেস-উইম্যান আমাতা রাদেওয়াগেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে।
প্রস্তাবটিতে পাঁচটি দফা রয়েছে। প্রস্তাবের প্রথম দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশের জনগণকে বিশেষ স্বীকৃতি দিতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের এই মাইলফলকের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে স্বীকৃতির প্রসঙ্গ রয়েছে।
প্রস্তাবের তৃতীয় দফায় কভিড-১৯ মোকাবেলায় যৌথ প্রচেষ্টাকে এবং চতুর্থ দফায় মিয়ানমারে জেনোসাইড থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গ রয়েছে। প্রস্তাবের পঞ্চম ও শেষ দফায় একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, উন্মুক্ত, মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার এবং অংশীদারি পুনর্নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট হিসেবে অবাধ, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্য এগিয়ে নিতে অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সুশাসন, উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমৃদ্ধ ও বহুমুখী সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।
১৯৭১ সালে সিনেটর টেড কেনেডির বাংলাদেশ ভ্রমণ ও পাকিস্তানের হাতে বাংলাদেশিদের দুর্দশা পর্যবেক্ষণ এবং তাদের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালানো এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তাদের মুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রস্তাবে উল্লেখ আছে। ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের বিবৃতিতে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি, স্বীকৃতির বিষয়টি স্বীকার করে ১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চিঠি, হার্বার্ট স্পিভাককে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের মুখ্য কর্মকর্তা নিয়োগ করে ১৯৭২ সালের ১৮ মে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস চালুর বিষয়টি প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম কোনো মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ২০০০ সালে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক সফরের বিষয়টি প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে স্থান পেয়েছে।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যৌথ সহযোগিতা, রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ হত্যার পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত, রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা এবং নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের আশ্রয় দেওয়ার কথাও প্রস্তাবে উল্লেখ আছে।
এ ছাড়া ২০১৭ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ষষ্ঠ অংশীদারি সংলাপে সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা সহযোগিতা, সন্ত্রাস মোকাবেলা, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারগুলোর বিষয়ে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের এক কোটি পাঁচ লাখ ডোজেরও বেশি টিকা প্রদান, ২০২১ সালে বাংলাদেশে জলবায়ু সহায়তার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অঙ্গীকার এবং উগ্রবাদকে পরাজিত করতে দুই দেশের প্রচেষ্টার কথাও প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে স্থান পেয়েছে।
প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। রীতি অনুযায়ী ওই কমিটিই প্রস্তাবের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে পারে।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন